রবিবার ০৭ ডিসেম্বার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

ইসলামিক রাজনীতি বনাম গণতান্ত্রিক রাজনীতি: মুসলমানদের অন্তর্দ্বন্দ্ব

ফেরারি মিজান ০২ অক্টোবার ২০২৫ ০১:২২ পি.এম

ইসলামিক রাজনীতি বনাম গণতান্ত্রিক রাজনীতি: মুসলমানদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির পরিমণ্ডলে গণতন্ত্রকে আজ সর্বজনীন একটি আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রের দিকনির্দেশনা দেয়। কেবল নামাজ, রোজা বা হজ যাকাত নয়—ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও ইসলামের নিজস্ব আইন-কানুন রয়েছে। তাই ইসলামিক রাজনীতি কোনো বিকল্প দর্শন নয়; বরং আল্লাহর প্রদত্ত এক অনিবার্য ব্যবস্থা, যা মুসলমানদের জন্য ঈমানের দাবিই পূরণ করে।

গণতন্ত্র বনাম ইসলামিক রাজনীতি:
গণতান্ত্রিক রাজনীতি মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। আজ যে আইন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হয়, কাল তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতেই বাতিল হতে পারে। অর্থাৎ এর ভিত্তি পরিবর্তনশীল। অন্যদিকে ইসলামিক রাজনীতি কুরআন ও সুন্নাহর উপর দাঁড়িয়ে আছে, যা চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। এখানে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মানুষের হাতে নয়, বরং আল্লাহর হাতে। তাই একজন মুসলিমের জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও ইসলামিক রাজনীতির মধ্যে বেছে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না; তার একমাত্র পছন্দ হওয়া উচিত আল্লাহর বিধান।

মুসলমানদের ভেতরের দ্বন্দ্ব:
দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ ইসলামের সবচেয়ে বড় বিরোধী বাহ্যিক কোনো শক্তি নয়; বরং মুসলিম সমাজের ভেতরেরই একাংশ। ব্যক্তিজীবনে মুসলিমরা নামাজ-রোজা, হজ-যাকাতের মতো ইবাদত মেনে চলে বটে, কিন্তু রাষ্ট্র জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে তারা নীরব কিংবা সরাসরি বিরোধিতা করে। ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুললেই অনেকে এটিকে অযৌক্তিক, অবাস্তব বা পশ্চাদপদ হিসেবে আখ্যা দেয়।

ফলে আজকের মুসলিম সমাজে ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ, কিন্তু সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কার্যকর নয়। এ অবস্থার কারণে কুরআনের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না।

কেন এই বাধা?
গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এর কয়েকটি প্রধান কারণ হলো—

মুনাফিক মানসিকতা:
অনেকেই মুখে ইসলাম মানার দাবি করলেও বাস্তবে কুরআনভিত্তিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে।

পশ্চিমা প্রভাব:
উপনিবেশিক শাসন ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম মননে গণতন্ত্রকে সভ্যতার মানদণ্ড হিসেবে স্থাপন করেছে।

অজ্ঞতা ও ভ্রান্ত ধারণা:
ইসলামী রাজনৈতিক দর্শন ও ইতিহাস সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে সঠিক ধারণার অভাব।

স্বার্থকেন্দ্রিকতা:
ক্ষমতা, সম্পদ ও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য অনেক নেতা ইসলামিক রাজনীতিকে এড়িয়ে চলে।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রকৃত অন্তরায়:
একথা বলা যায়—আজকের বাস্তবতায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় নাস্তিক, সেক্যুলারবাদী বা ভিন্নধর্মাবলম্বী নয়; বরং মুসলিম নামধারী সেই অংশ, যারা মুখে ইসলামের কথা বললেও রাষ্ট্র জীবনে আল্লাহর বিধান কায়েম করতে চায় না। তারা কোরআনের রাজনৈতিক দর্শনকে অস্বীকার করে, অথচ নিজেদের মুসলিম পরিচয়টুকু ধরে রাখে। এ ধরনের মানসিকতা আসলে মুনাফিকির শামিল।

উপসংহার:
ইসলামের মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠা করা—ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত। কিন্তু মুসলমানদের ভেতরকার এই দ্বন্দ্বের কারণে ইসলামিক রাজনীতি কার্যকর হচ্ছে না। তাই এখন প্রয়োজন মুসলিম সমাজের ভেতরেই নতুন করে চেতনার জাগরণ।

আজকের মুসলিম বিশ্বের সামনে স্পষ্ট একটি প্রশ্ন—আমরা কি আল্লাহর প্রদত্ত বিধান মেনে চলব, নাকি মানুষের তৈরি পরিবর্তনশীল মতবাদের পেছনে ছুটব? ইতিহাস সাক্ষী, আল্লাহর বিধানকে পাশ কাটিয়ে কোনো জাতি কখনো প্রকৃত মুক্তি লাভ করেনি। তাই মুসলিম সমাজের উচিত ইসলামিক রাজনীতিকে গ্রহণ করে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
ইসলামের মূল কথা হলো আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠা করা—ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত। কিন্তু মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বের কারণে ইসলামিক রাজনীতি কার্যকর হচ্ছে না। মুসলিম সমাজের জন্য তাই প্রশ্নটি এখন স্পষ্ট: আমরা কি আল্লাহর আইন মেনে চলব, নাকি মানুষের মতের শাসনেই আটকে থাকব?

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যে জাতি আল্লাহর বিধানকে পাশ কাটিয়েছে, তারা কখনো প্রকৃত মুক্তি বা স্থায়ী শান্তি পায়নি। মুসলিম সমাজের জন্য তাই একমাত্র সমাধান হলো কুরআনভিত্তিক ইসলামিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। এটাই প্রকৃত মুক্তির পথ, এটাই সত্যিকার অগ্রগতির ভিত্তি।

লেখক: ফেরারি মিজান
মেইল ferarimijan1@gmail.com

আরও খবর

news image

রাজনীতি, বুদ্ধিজীবী ও টকশো-সংস্কৃতি: বিভ্রান্ত এক দেশ

news image

পেশা নয়, সেবা—এটাই হোক রাজনীতি

news image

যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনার থেরাপি প্রয়োজন

news image

ইসলামিক রাজনীতি বনাম গণতান্ত্রিক রাজনীতি: মুসলমানদের অন্তর্দ্বন্দ্ব

news image

শারীরিক ও মানসিক সুস্থ থাকতে দরকার আলিঙ্গনের

news image

সঙ্গী নার্সিসিস্ট কি না চিনবেন যেভাবে

news image

৬ উপসর্গে এআই নয়, চাই সরাসরি চিকিৎসক

news image

এসিতে বিস্ফোরণ? এই ৫টি সংকেত কখনোই উপেক্ষা করবেন না!

news image

যেভাবে বুঝবেন আপনার বিশ্রাম দরকার

news image

বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ আজ

news image

৪৩০ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, লাগবে এসএসসি পাস

news image

বাংলাদেশের স্বৈরতন্ত্রের ইতিহাস ও পি আর পদ্ধতির প্রযোজ্যতা

news image

জাপানিদের দীর্ঘ ও সুখী জীবনের রহস্য

news image

"একাত্তরের অর্জিত নামমাত্র স্বাধীনতা"

news image

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বিতর্কিত করতেছে কারা?

news image

সোলো ট্রিপের জন্য ঘুরে আসুন এই ৫টি দেশে

news image

পুরো মানুষ গিলে ফেলতে সক্ষম যে ৬টি ভয়ংকর প্রাণী

news image

চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা কি নিরাপদ?

news image

খোলা চিঠি

news image

দামাল কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চে আবারো ‘দামাল ছেলে নজরুল’

news image

তারেক জিয়ার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

news image

রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় নির্বাচন ব্যবস্থা!

news image

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রয়াণ দিবসে সুরেলা সন্ধ্যা

news image

রবিন রাফানের এআই মাস্টারক্লাসে অভূতপূর্ব সাড়া, দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা

news image

যেভাবে অনলাইনে ভাইরাল হওয়া কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো

news image

ঈদ সালামি থেকে ঈদী: সংস্কৃতির বিবর্তন

news image

সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো মসজিদ

news image

শিশু সাহিত্যের ধ্রুবতারা শিবুকান্তি দাশ

news image

জনতার কন্ঠস্বর

news image

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ