নিজস্ব প্রতিবেদন ১৪ অক্টোবার ২০২৪ ০৬:৩৪ পি.এম
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে রিমান্ডের আসামি এক দিনের মধ্যে জামিন পাচ্ছেন, আবার কারও রিমান্ড শুধু বাড়ছে। গ্রেপ্তার ও জামিনে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে আইনি সহায়তা সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘একজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নেওয়ার সময় অপদস্থ করে কীভাবে? জনরোষ? দায়িত্ব কার? রাষ্ট্রের। আমার সঙ্গে বিরোধ থাকতে পারে, দ্বিমত থাকতে পারে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে তার ওপর নির্যাতন করা হবে, সেটা আমি মানতে রাজি না। যেভাবে ভিডিও করা হচ্ছে সেটা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত?’
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ‘এমন আরও অনেক ঘটনা আছে। এদের যখন আদালতে নেওয়া হচ্ছে, তখন সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালাতে দেখছি। কিন্তু হামলার কারণে তো কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখছি না। কাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যারা আগের সরকারে ছিল। মানি লন্ডারিংয়ে আমরা কি কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখছি? আমরা তো জানতাম কিছু কিছু লোক বন্দি আছে, তারা দেশের বাইরে গেল কীভাবে? এই প্রশ্নগুলো আমিই রাখলাম। এগুলোতে যদি মনে হয়, ন্যায় বিচার আছে, তাহলে আছে।’
বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আদালতে নেওয়ার সময় তারা নানা ধরনের হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এমনকি অনেকের পক্ষেই আদালতে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। আবার কারও পক্ষে আইনজীবী দাঁড়ালেও সেই আইনজীবী তার পছন্দের নয়। আদালতেই আয়োজন করে একজন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ঘরানার অধিকাংশ আইনজীবী এখনও কোর্টে যান না। যারা যাচ্ছেন তাদের অনেকই শঙ্কার মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা একদম আইনি সুবিধা পাচ্ছেন না। মামলাগুলোই তো কনফিউজিং (বিভ্রান্তিকর)। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের জন্য যেমন এটা হ্যারাজম্যান্ট (হয়রানি), তেমনি যারা ভিকটিম তাদের জন্যও অবিচার। বাদিরা এখন এসে বলছেন, ‘আমি আসামি চিনি না’। আমরা জানি কোন ঘটনায় হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। এখানে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, পিক অ্যান্ড চুজ করা হচ্ছে। এটা হওয়া উচিত না। প্রশাসন কিন্তু প্রথমে বলেছিল, ‘তদন্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে’।’
আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘শাহরিয়ার কবির জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে তাকে ডিভিশন দিতে দুইবার বলেছেন আদালত। কিন্তু তাকে দেওয়া হচ্ছে না। অসুস্থ যারা আছেন তাদের গরম পানি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।’
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ লিখেছেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে আমি উদ্বেগজনক বলে মনে করি। যেকোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার, তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। আটক ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, যাতে করে এই ধারণা তৈরি না হয় যে, তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হতে পারেন।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এটা সত্যি যে, প্রত্যেকটা আসামির আইনি কাঠামোতে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে। একই সঙ্গে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে, চেতনাবোধ। জুলাই হত্যাকাণ্ডের আদর্শিক মূলমন্ত্র কী ছিল? ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক যুদ্ধ। রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আপনাকে মনে রাখতে হবে, আদালতে যেটা হচ্ছে, সেটা ‘সিভিলাইজ প্রোটেস্ট’। এটা তো থাকতে পারে। আমি তো লন্ডনে থাকা অবস্থায় দেখেছি, টনি ব্লেয়ারকে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে এটা সারা বিশ্বেই আছে। কাদের বিরুদ্ধে এটা হচ্ছে, যারা গণধিকৃত। যদিও যেটা হচ্ছে সেটা কাম্য না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশ গত সোমবার গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় দুটি হত্যা মামলা, খিলগাঁও থানায় দুটি হত্যা মামলা ও একই থানায় আরও দুটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা হয় পৃথক মামলা। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত একটি হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঠিক পরদিনই রিমান্ডে থাকাকালে অসুস্থ বোধ করায় তদন্ত কর্মকর্তা তাকে আদালতে হাজির করেন। এ সময় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। পৃথক ছয়টি মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমান তার জামিন দেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় আদালত থেকে মুক্তি পান তিনি।
সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জামিনের ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেটা তো আমরা মিডিয়ার কারণেই জানতে পেরেছি। একজনকে পেন্ডিং মামলায় শোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। অন্যদিকে, একজনকে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় জামিন দিয়ে দিচ্ছে। রিমান্ড শেষ না হলে জামিনের সুযোগ নেই। এখন যেটা হচ্ছে সেটা কোনো আইন নয়, এটাকে কাজীর বিচারও বলা যাবে না।’
১৮৭৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি এখনও এই অঞ্চলের চারটি দেশে কার্যকর আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে একটা নজিরও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, পাঁচ দিনের রিমান্ড হয়েছে, এক দিন পরই জামিন হয়ে তিনি মুক্তি পেয়ে গেছেন। এই ঘটনাগুলো দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উচ্চ আদালতে যাব, আমাদের নিরাপত্তা কী? আমরা তো নিরাপদ বোধ করছি না। আর উচ্চ আদালত কি বিষয়গুলো দেখছেন না? তারাও তো দেখছেন। আমরা জানি না কে টার্গেট? এই টার্গেট অবস্থায় তো বিচার চলতে পারে না।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘জামিনের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সেটা আইনে যে করা যাবে না তা নয়, এটা আইনের ব্যত্যয় নয়। কিন্তু এমন প্রচলন আমাদের নেই। তবে যার জামিনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাকে কিন্তু পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। এরপর আদালত তার জামিন দিতেও পারেন, বা কারাগারে পাঠাতে পারেন। কাউকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিলে যে পাঁচ দিনই রাখতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। পুলিশ চাইলে এর মধ্যে যেকোনো সময় তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করতে পারে। তখন আদালতের এখতিয়ার তাকে জামিন দেবেন কি-না?’
আইনে বৈষম্যের সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনে আছে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। ফলে এই মামলায় একই ধরনের অপরাধের দায় যদি কারও বিরুদ্ধে থাকে তাতে একজন জামিন পেলে অন্যজন জামিন চাইতে পারেন। তাকে জামিন না দিলে বৈষম্য হবে। এই সরকারও তো বৈষম্যবিরোধী। তবে এখানে অপরাধের গুরুত্ব যদি আলাদা হয়, তাহলে বিষয়টি আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের এই নেতার নির্দেশে ১১টি গুম-খুন হয়েছে। তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে তার মতো লোক জামিনে মুক্তি পেলেন?’
অন্যদিকে, অনেকের রিমান্ডের মেয়াদ বেড়েই চলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা ১৭ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের একসঙ্গে ৪৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বিভিন্ন মামলায় ১৮ দিনের পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন তিনি। একই দিনে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকেরও ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ড বা জামিনের ক্ষেত্রে আদালত ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ করছেন কি-না জানতে চাওয়া হয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের কাছে। তিনি বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামির জামিনের বিষয়ে আমরা তো আদালতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারি না। তবে যা হয়েছে, তাতে জনমনে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে থাকা অবস্থায় জামিন দেওয়ায় মানুষের মনে নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করছে।’
' ভোটের আগ পর্যন্ত পরাজিত শক্তি বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে’
জুলাই স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করলেন ড. ইউনূস
কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে সাক্ষাতের গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন পাটোয়ারী
বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
মধ্যরাতে জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা হান্নান মাসউদের
বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান: রাষ্ট্রপতি
মঙ্গলবার বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
অর্থনীতির চিত্র নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
গুলশানে চাঁদাবাজির ১০ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ
জুলাই ঘোষণাপত্র / ছাত্র-জনতার জন্য ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার
শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন এনসিপি নেতা-কর্মীরা, প্রস্তুত মঞ্চ
রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা
এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে যা থাকতে পারে
জামায়াত আমিরের খোঁজ নিতে হাসপাতালে বিএনপির প্রতিনিধি দল
হৃদয়বিদারক স্মৃতি নিয়ে ক্লাসে ফিরেছে মাইলস্টোন শিক্ষার্থীরা
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ছাড়পত্র পেল আরও এক শিক্ষার্থী
আ.লীগের গোপন মিটিং আইনশৃঙ্খলায় প্রভাব ফেলবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আওয়ামী লীগ অপকর্ম করতে চাইলে কোনো ছাড় পাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, ৫ আগস্ট উপস্থাপন
১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা
প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে ২ বছরের কারাদণ্ড
গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
পর্যবেক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত, ‘ভুয়া’ সংস্থাকে নিবন্ধন নয়: ইসি
ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকে রাজনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ ফিরেছে
দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়ের আভাস
দশ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলছে সরকারি অফিস
বিএনপিও ছাড় দিয়েছে, কিন্তু কেন?
দিল্লিতে গোপন সাক্ষাৎকারে জয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন শেখ হাসিনা
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সমর্থন যুক্তরাজ্যের