রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
শিক্ষা

১৬ বছরে সরকারের অপচয় ৩ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৫ জুন ২০২৫ ১১:২৪ এ.এম

১৬ বছরে সরকারের অপচয় ৩ হাজার কোটি টাকা ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত চাহিদার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপিয়ে গত ১৬ বছরে সরকারের অপচয় হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত পাঠ্যবই কালোবাজারিতে অধিক মূল্যে বিক্রি সিন্ডিকেটে জড়িত একশ্রেণির উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিটি বছরের শুরুতে পাঠ্যবইয়ের সংকট ছিল। আর সেই সংকটকে পুঁজি করে গড়ে উঠে সিন্ডিকেট। দেশের সব উপজেলা থেকে পাঠ্যবইয়ের অতিরিক্ত চাহিদা আসে, যা অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রি করা হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কঠোর নজরদারিতে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কমেছে। যা ছাপাতে খরচ হতো প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ এবার এনসিটিবির বর্তমান প্রশাসন সরকারের ২০০ কোটি টাকা খরচ কমিয়ে দিল। উল্লিখিত সিন্ডিকেটের কারণে গত ১৬ বছর ধরে প্রতি বছরই সরকারের ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বলে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে জানান। 

আগামী বছরের জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ গত মে মাস থেকে শুরু করেছে এনসিটিবি। জানা গেছে, প্রতি বছর কত সংখ্যক বই ছাপানো হবে, তা ঠিক হয় উপজেলা, থানা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে আসা বইয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল—মাঠ থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বইয়ের চাহিদা আসে। তাই প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি অতিরিক্ত বই ছাপাতে হয়। এতে সরকারের ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতো। এ ক্ষেত্রে এনসিটিবিও খুব একটা যাচাই করত না বলে অভিযোগ আছে। বেশি বই ছাপা হওয়ায় খরচও বেশি হতো। কিন্তু সব বই কাজে লাগত না; কিন্তু এবার এনসিটিবি চাহিদা তৈরির কাজে বেশি যাচাই-বাছাই করেছে। কর্মকর্তারা নিজেরাও কিছু কিছু এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। মূলত এ কারণেই এবার মোট বইয়ের সংখ্যা কমেছে। এনসিটিবির একটি বিশেষ টিম গত জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে কাজ শুরু করে। তারা তিনটি ভিন্ন পদ্ধতিতে বইয়ের চাহিদা যাচাই করে। প্রথমে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাহিদা পাঠানোর সময় সতর্ক থাকতে বলা হয় এবং অতিরিক্ত চাহিদার প্রমাণ মিললে শিক্ষকের এমপিও স্থগিতসহ কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর মাঠ থেকে আসা চাহিদা শিক্ষাবোর্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় মেলানো হয়। তৃতীয়টি ছিল এনসিটিবির নিজস্ব অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে একাধিক ধাপে তা যাচাই করা হয়। এছাড়া এনসিটিবি ৩২টি টিম গঠন করে সারা দেশে পাঠায়, যারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দফায় দফায় মিটিং করেন এবং অতিরিক্ত চাহিদা প্রদান করলে কঠোর শাস্তির বার্তা দেন। এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা সতর্ক হন এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি বইয়ের চাহিদা কম আসে।

এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৪০ লাখের বেশি। এসব বইয়ের মধ্যে দশম শ্রেণির জন্য প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ বই ছাপানো হয়। নবম-দশম শ্রেণির জন্য একই বই; কিন্তু এ বছর শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কারণে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু এক বছরের জন্যই। আগামী বছর দশম শ্রেণির জন্য নতুন বই ছাপানো হবে না। ফলে প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ বই কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই হিসাব বাদ দিয়েও আগামী বছরের জন্য মাধ্যমিকে ৩ কোটি ৮০ লাখের মতো বইয়ের চাহিদা কম এসেছে। আগামী বছরের জন্য মাধ্যমিকে মোট ২১ কোটি ৪০ লাখের মতো বইয়ের চাহিদা এসেছে। অন্যদিকে চলতি বছরের জন্য প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রাথমিকে এবার ৭০ লাখের মতো কম চাহিদা এসেছে। এনসিটিবির সূত্রমতে, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির প্রতিটি বই ছাপার খরচ তুলনামূলক কম। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে খরচ বেশি। একেকটি বই ছাপার কাজে গড়ে ৬০ টাকা খরচ হয়। সেই হিসাবে আগামী বছর মাধ্যমিকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কম খরচ হতে পারে। এছাড়া প্রাথমিকেও খরচ ৪০ কোটি টাকার মতো কম হবে।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তবে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বইয়ের চাহিদা আনার ক্ষেত্রে এবার তারা বেশ সতর্ক ছিলেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং করেন। আবার সতর্ক করে দেওয়া হয় প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত চাহিদা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নিতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গেও শিক্ষার্থীর সংখ্যাটি মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি করেছিল এনসিটিবি। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়। আর বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই দুষ্প্রাপ্য হলেও অন্যান্য বছরের মতো এবারও অনেকটা সহজলভ্য ছিল দোকানে। নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, আরামবাগ ও নয়াপল্টনের মুদ্রণ, ছাপা ও বাঁধাই প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বই বিক্রির দোকানে পাওয়া যায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই। সারা দেশ থেকে অতিরিক্ত চাহিদার পাঠ্যবই ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকায়। প্রাথমিকের প্রতি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের প্যাকেজ বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকায়। আর মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির পাঠ্যবই প্যাকেজ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সন্তান লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাবে, এ দুশ্চিন্তা থেকে অনেক অভিভাবক এসব বই দোকান থেকে ক্রয় করেন বেশি টাকা দিয়ে। সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করে আসছে। গত ২২ জানুয়ারি বিকালে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ছাপা দুই ট্রাকভর্তি প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়। আটক করা হয় দুই জনকে। বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য নির্ধারিত মাধ্যমিক পর্যায়ের বই পাচারের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে শেরপুর জেলায়। গত ২২ জানুয়ারি রাতে শেরপুর সদর উপজেলায় পুলিশ বইভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করে। যেখানে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ৯ হাজার সরকারি বই পাওয়া যায়।

এদিকে চলতি বছরের ‘বাজে অভিজ্ঞতা’ মাথায় নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এবার আগেভাগেই শুরু করেছে এনসিটিবি। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক শ্রেণির দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

আরও খবর

news image

১৬ বছরে সরকারের অপচয় ৩ হাজার কোটি টাকা

news image

মাদ্রাসা-মাধ্যমিকের ছুটি শুরু আজ, প্রাথমিক-কলেজে ৩ জুন

news image

নিয়ম ভেঙে জাবির ছাত্র হলে ছাত্রীর প্রবেশ

news image

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগের 'অ্যালামনাই রিইউনিয়ন ২০২৫' অনুষ্ঠিত

news image

স্টামফোর্ডে আয়োজিত হলো মাদকবিরোধী সেমিনার

news image

জুমার নামাজের পর গণঅনশনে বসবে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

news image

জবিতে আনঅফিসিয়াল শাটডাউন, দুদিন পার হলেও অনড় শিক্ষক-শিক্ষার্থী

news image

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে জাবিতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

news image

শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর, বাড়লো উপবৃত্তি তথ্য পাঠানোর সময়

news image

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

news image

প্রাথমিক শিক্ষকদের জেলা থেকে জেলায় বদলি আবেদন শুরু

news image

৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

news image

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২

news image

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ

news image

এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই : শিক্ষাবোর্ড

news image

স্টামফোর্ডে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে গণমাধ্যমে কর্মরত শিক্ষার্থীদের ইফতার

news image

প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহর মৃত্যুতে ইউজিসির শোক

news image

এসএসসি পরীক্ষার সময় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

news image

তার্কিশ এয়ারলাইনসের ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য অফিসিয়ালি চুক্তিবদ্ধ হলেন সালাহউদ্দিন সুমন 

news image

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী পিঠা ফেস্টিভাল অ্যান্ড শাড়ি পাঞ্জাবি ডে" অনুষ্ঠিত

news image

দেশের প্রথম মাদক বিরোধী সংগঠন স্ট্যামফোর্ড মাদক বিরোধী সংগঠন

news image

নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর চেষ্টা/সরকার প্রেসের ১০ লাখ ফর্মার ৬০ হাজার বই জব্দ

news image

মানসম্মত গবেষণাকর্ম পরিচালনার আহ্বান ইউজিসির

news image

ডিজিটাল লিটারেসিতে ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেট পেল ১৮ জন শিক্ষার্থী

news image

ঢাকা কলেজে এক ঘণ্টায় ৭ ককটেল বিস্ফোরণ

news image

২০২৫ সালে মাধ্যমিকে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

news image

দাখিল পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল

news image

যে কারণে ১৭ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার

news image

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নতুন সভাপতি অধ্যাপক মাছুদ, কোষাধ্যক্ষ লতিফ

news image

একই দিনে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে