বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

দেড় বছরের ম্যাজিকে প্রতিমন্ত্রী, মোহাম্মদ এ আরাফাত এখন কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৮ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ০৪:২২ পি.এম

দেড় বছরের ম্যাজিকে প্রতিমন্ত্রী, মোহাম্মদ এ আরাফাত এখন কোথায়? ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন মোহাম্মদ এ আরাফাত। তার আগে দলের কোনো পদে না থাকলেও টেলিভিশনের টকশোতে মাঝে মধ্যে দেখা যেত। তারপর দলের ত্যাগীদের পেছনে ফেলে কেড়ে নেন ঢাকা-১৭ আসনে দলীয় মনোনয়ন, হন সংসদ সদস্য। স্থান করে নেন মন্ত্রিপরিষদেও।

মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে বাগিয়ে নেন দেশের পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদের প্রতিমন্ত্রীর পদ। অল্প সময়ে ‘চমক’ দেখানো সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের হদিস নেই সরকার পতনের পর থেকে। নেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ। দলের দুঃসময়ে গা ঢাকা দিয়েছেন হঠাৎ উঠে আসা এ নেতাও।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন তিনি। তারপর শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

দলীয় সূত্র মতে, মন্ত্রিসভায় জায়গা নেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কোণঠাসা করে নিজেকে বড় নেতা হিসেবে জাহির করতেন আরাফাত। দলের যেকোনো কর্মসূচিতে সিনিয়রদের পাশ কাটিয়ে দাপট দেখাতেন। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিজেকে বড় নেতা পরিচয় দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘নেশাগ্রস্ত’ প্রমাণ করার চেষ্টার মতো বাজে মন্তব্য করেছেন। এতে করে আরাফাত শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উসকে দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আরাফাতরা আওয়ামী লীগের জন্য কিছু ছিল না। তারা নিজেদের স্বার্থে দলকে বিক্রি করেছে। সে তো কোনো দিন ছাত্ররাজনীতি করেনি। টকশোতে কথা বলেই আজ বড় নেতা। আজ সে কই? দলের বড় নেতা সেজে ছিল, এখন কেন দলের হাল ধরছে না। সবই ধান্দাবাজ।’

দলের সহকর্মী হিসেবে মোহাম্মদ এ আরাফাত কেমন ছিলেন– এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। তিনি দলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তবে আমরা যারা এক-এগারো বা তার আগে দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলাম, তাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের দূরত্ব ছিল। আমরা মাঠে থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছি আর তিনি টকশো করে, কারো বন্ধু পরিচয়ে নেতা হয়েছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন বন্ধুর প্রভাব দেখাতে। অনেক ক্ষেত্রে দেখিয়েছেনও।’

জানা গেছে, মোহাম্মদ এ আরাফাতের বাবা মোহাম্মদ সেতাব উদ্দিন বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক ছিলেন। শহীদুল্লাহ কায়সার এবং পান্না কায়সারের মেয়ে শমী কায়সারকে ২০০৮ সালের ২৪ জুলাই বিয়ে করেন তিনি। ২০১৫ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর আরাফাত বিয়ে করেন শারমিন মুস্তারিকে। তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট ও নীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

দলীয় সূত্র মতে, মোহাম্মদ এ আরাফাত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। তিনি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ২৮ হাজার ৮১৬ ভোটে হিরো আলমকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগে চিত্রনায়ক ফারুক মারা গেলে এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আরাফাত।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই ডজনেরও বেশি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং শেখ হাসিনার সাবেক জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে গত ২৭ আগস্ট গুঞ্জন উঠেছিল গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কেউ এর সত্যতা নিশ্চিত করেননি। আরাফাত আটক নাকি আটক নন তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীকে আটক করা হয়নি। অন্য কোনো বাহিনী কর্তৃক আটক হয়েছেন কি না তাও নিশ্চিত করেননি তিনি। একইভাবে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আরাফাত ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে লুকিয়ে রয়েছেন। পরে অবশ্য দূতাবাস জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রচার করা হচ্ছে। আরাফাতের লুকিয়ে থাকার তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।

আরাফাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ৪৬ জন এ মামলার আসামি। এটি ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলার আসামি আরাফাত।

অন্যদিকে গত ১২ আগস্ট পলাতক থাকা আরাফাত, তার স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়।

তাছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে সীমান্ত পার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কাজে ঢাকা মহানগর উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের দুই-তিনজন কর্মকর্তা সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ করেন গুলশান সোসাইটির নির্বাহী কমিটির সদস্য আরাফাত আশওয়াদ ইসলাম। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ বাহিনীকে আরাফাত উসকে দিয়েছেন দাবি করে আশওয়াদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় মোহাম্মদ এ আরাফাত একের পর এক বাজে মন্তব্য করেছেন। গুলি শেষ হবে না বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে উসকে দিয়েছেন। যার ফলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।’

জানতে চাইলে ঢাকা-১৭ আসনের এক কাউন্সিলর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আরাফাত ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তিনি এ আসনের কোনো নেতাকেই নেতা মনে করতেন না। কাউকে মূল্যায়ন করতেন না। তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়ের বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন। তার ভয়ে নেতাকর্মীরা তটস্থ থাকত।’

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ এ আরাফাত ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘তারেক রহমান আসছে’ স্লোগানে মুখর ঢাকার আদালতপাড়া

news image

সায়েন্সল্যাবে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে যা বলছে পুলিশ

news image

এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়: ফারুকী

news image

আনন্দ শোভাযাত্রার ‘পানি লাগবে পানি’

news image

বর্ণিল আয়োজনে শুরু ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’, হাজারো মানুষের ঢল

news image

ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ

news image

ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া চেয়ে শেষ হলো মার্চ ফর গাজা

news image

ফিলিস্তিনের পতাকায় ছেয়ে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

news image

হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

news image

মার্চ ফর গাজা : সোহরাওয়ার্দীতে আসতে শুরু করেছে মানুষ

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ, বাদ পড়ল নৌকা

news image

কাদের-কামালসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ

news image

আশিক চৌধুরীর ভিডিও শেয়ার করলেন সোহেল তাজ, বললেন— চমৎকার

news image

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় পোশাক জায়ান্ট ইন্ডিটেক্স

news image

বিজি প্রেসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন

news image

শেখ তাপস সিঙ্গাপুরে, সন্ধান দিলেন ‘ডিবি হারুন’

news image

অতি গোপনীয় অভিযোগ নিয়ে দুদকে হাসনাত-সারজিস

news image

মুজিববর্ষ পালনে রাষ্ট্রের চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়, অনুসন্ধানে দুদক

news image

সাবেক এমপি মোরশেদ আলম গ্রেপ্তার

news image

নববর্ষ সামনে রেখে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

মোদি সরকার মুসলমানবিরোধী আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছে: আসিফ নজরুল

news image

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় বাংলাদেশ

news image

সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

বিদেশি মিডিয়া অনেক সময় মিথ্যা সংবাদ দিতে চায় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

ড. ইউনূসকে ‘বস’ সম্বোধন করে ধন্যবাদ জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

news image

শীলার হিজাব নিয়ে তসলিমার কটাক্ষ, জবাবে যা বললেন আসিফ নজরুল

news image

ব্যাংককে ইউনূস-মোদির বৈঠক চলছে

news image

ব্যাংককে ড. ইউনূস-নরেন্দ্র মোদির বৈঠক আজ

news image

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মাথায় গুলিবিদ্ধ সেই মুসা দেশে ফিরেছে

news image

২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন : প্রেস সচিব