শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

ছেলেকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি মা

নিজস্ব প্রতিবেদন ০৩ নভেম্বার ২০২৪ ১০:৫৮ এ.এম

ছেলেকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি মা ছবি: সংগৃহীত

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুজ্জামান তানভীন স্বপ্ন দেখতেন দেশ ও বিদেশের আকাশে তার বানানো ড্রোন উড়বে। তবে তার স্বপ্ন পূরণের আগেই শহীদ হয়েছেন জুলাই বিপ্লবে। শেষবারের মতো তাকে বিদায়ও জানাতে পারেননি তার মা বিলকিস জামান।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তানভীনের মা বিলকিস জামান (৪৫)।

তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই দুপুরে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে পুলিশ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় তানভীন। ঘটনাস্থলে শহীদ হয় সে। পুলিশের গুলি তার গলার পাশ ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। বুকে ছিল অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন। আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে সেটা কখনও কল্পনাও করিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেল সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে। সেদিন আমি ব্যস্ত ছিলাম। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খেয়েছে। চেয়ারে বসে ভাবছিলাম টেবিলে এঁটো প্লেট-বাটি এলোমেলো হয়ে আছে। এগুলো গুছিয়ে নেই। এই ভেবে দরজা পর্যন্ত গেলাম না। তানভীন এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে দরজার সামনে এগিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেল। অন্যদিনের মতো বিদায় জানানো হয়নি তানভীনকে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। প্রতিদিন তার সালামের উত্তর দিয়ে তিন কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম।

তানভীনের ছোটবেলা থেকে এই-ই হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিনের এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে গেল কেবল ১৮ জুলাই। সালাম দেওয়ার পর সালামের উত্তর দিয়েছি শুধু। এতটুকুই আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা। এ যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে তা তো আমি বুঝিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’

আন্দোলনের তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমার মেজ বোন তানভীনের মা আমাকে মোবাইলে ফোন করে বললেন, বাবু, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জায়গা থেকে তোর ভাগিনার শরীরে গুলি লাগছে। তার অবস্থা তো ভালো না। এই কথা শুনে আমি টঙ্গী থেকে উত্তরার দিকে রওনা দেই। আব্দুল্লাহপুরে আসার পরপরই আপা আবার ফোন করে আহাজারি করে জানায়, বাবুরে তোর ভাগিনা তো আর নাই। জানতে পারি কুয়েত- মৈত্রী হাসপাতালে আমাদের সবার প্রিয়, আমাদের দুই পরিবারের বংশের বড় ছেলে তানভীনের মরদেহ পড়ে আছে। আমি বহু বাধা-বিপত্তি পার হয়ে হাসপাতালে পৌঁছাই। গিয়ে দেখি হাসপাতালের বাথরুমে (তাৎক্ষণিকভাবে ডোম ঘর বানানো) তানভীন ছাড়া আরো চারটি লাশ পড়ে আছে। মরদেহ আনতে গিয়ে পুলিশ ও হাসপাতালের ডাক্তারদের বাধার মুখে পড়ি। অনেক বাগ্‌বিতণ্ডার পর তার মরদেহ উদ্ধার করি বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। পরে তাকে নিয়ে আজমপুরে তাদের ভাড়া বাসায় এসে প্রথম জানাজা দেয়ার পর তার মরদেহ ব্রাহ্মণবাাড়িয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আনুমানিক রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভাগ্নে ছোটবেলায় আমাদের কাছে পড়াশোনা করেছে। জাহিদুজ্জামান তানভীন টঙ্গী থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী থেকে এইচএইচসি পাস করে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর আগে।

তার বাবা শামসুজ্জামান(৫২) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং তার একমাত্র বোনও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। সে এখন আমেরিকাতে বাস করছে। আমাদের মামা ভাগিনার সম্পর্ক ছিল মধুর। বাসা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে থাকা বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়েছে।’

এ্যান্টস এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও বন্ধু তাওসিফুল ইসলাম তওসিফ বলেন, ‘তানভিন এ্যান্টস এর টেকনিক্যাল সাইডটা দেখত। আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটা করা। খুবই ট্যালেন্টেড ইঞ্জিনিয়ার ছিল সে। অসম্ভব ভালো একজন মানুষও। মৃত্যুর আগের দিন ১৭ জুলাই রাত দশটা পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ১৮ জুলাই যেদিন ও চলে গেল সেদিনও কিছু ইন্টারভিউ নেয়ার কথা ছিল। পরে রাতে যখন শুনতে পারি দেশের সিচুয়েশন খুব খারাপ হয়ে গেছে তখন তা ক্যানসেল করে সিদ্ধান্ত নেই যে কালকে (১৮ জুলাই) কেউ অফিসে আসবো না। পরের দিন ওর আম্মু ওকে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য পাঠিয়েছিল। এরপরে পৌনে একটার দিকে খবর আসে যে ওর গায়ে গুলি লেগেছে। পরে এক ফ্রেন্ড কল দিয়ে জানায় ও আর নেই।’

তাওসিফ আরও বলেন, ড্রোনের সম্প্রসারণ নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল। তানভীনকে ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান হয়তো কখনোই দাঁড়াত না। অ্যান্টস বর্তমানে ড্রোনের পাইলটিং ও ম্যাপিং নিয়ে কাজ করে। অ্যান্টস বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি, কৃষি অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। তানভীন তার সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়ে গেলো। তাানভীন চলে যাওয়ায় এ খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

তানভীনরা দেশের জন্যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। শুরুর আগেই জীবন নিঃশষে বিলিয়ে দিয়েছে। তানভীন শহিদ হওয়ার পর তাই তার এলাকার গোল চত্বর পাঁচ মাথার মোড় গোদাগাড়ীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘শহিদ তানভীন চত্বর’। আগে এই চত্বরের নাম ছিল ফিরোজ গোল চত্বর। দুটি গাছও সেখানে লাগানো হয়েছে।

আরও খবর

news image

শ্রেণিকক্ষে আলু মজুদ, ক্লাস না করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

news image

৪ মাসের সন্তান বিক্রি করে মোবাইল ফোন কিনলেন মা, উদ্ধার করল পুলিশ

news image

চেকপোস্ট ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

news image

স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ঘোষণা হিরো আলমের

news image

চিত্রশিল্পীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬

news image

ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় শিক্ষক, গণপিটুনি দিলো জনতা

news image

সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নৈশপ্রহরীর পকেটে মিলল ৪০ হাজার টাকা

news image

আদালতের হাজতখানায় মারধরের শিকার আ’লীগ নেতা

news image

বই দেখে পরীক্ষা দিলো শিক্ষার্থীরা, ভিডিও ভাইরাল

news image

টিকটকার হুর-ই জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে

news image

সাড়ে ৮০০ টাকার জন্য প্রাণ গেল মুদি দোকানির

news image

যুবদল নেতার উপর হামলা, শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

news image

টেন্ডার পাওয়ায় বৈষম্যবিরোধী নেতার কাছে ‘জিলাপি’ খেতে চাইলেন ওসি

news image

বাঙালি বিয়ে খেতে পাবনায় রুশ তরুণী

news image

আ.লীগ-জামায়াত নেতার হামলায় বিএনপির ৬ নেতা আহত

news image

সুদের টাকার জন্য নারীকে মারধর, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা

news image

ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি

news image

তরমুজ সাদা হওয়ায় বিক্রেতাসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম

news image

এসএসসির হলে ঢুকে ছাত্রীদের পানি পান করানোয় ছাত্রদল নেতার সমালোচনা

news image

এসএসসির হলে ঢুকে ছাত্রীদের পানি পান করানোয় ছাত্রদল নেতার সমালোচনা

news image

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

news image

নড়াইলে আ.লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে

news image

পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে বাবার খাটিয়া কাঁধে নিল নাহিদ

news image

ভালোবাসার টানে ২৪ বছর পর আবারও বরগুনায় ডেনমার্কের রোমানা

news image

জয়পুরহাটে কারাগারে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিলো এক শিক্ষার্থী

news image

ক্রেতা সেজে নারী মাদক কারবারিকে ধরল পুলিশ

news image

‘আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরায় দেন, তারে দেশে নিয়া আসেন’

news image

মক্তবে শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা, ভয়ে বাড়ি ছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবার

news image

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার ‘মিথ্যা’ স্বাক্ষী গ্রেপ্তার

news image

ভালুকের শরীরে পচন, আ. লীগ নেতার সেই চিড়িয়াখানা সিলগালা