বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ধর্ম

শাম অঞ্চলে রাসূল (সা.) এর যুগে যে দুই যুদ্ধ হয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদন ১২ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৩:৫৭ পি.এম

শাম অঞ্চলে রাসূল (সা.) এর যুগে যে দুই যুদ্ধ হয়েছিল ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সিরিয়াকে এক সময় শাম বলা হতো। বর্তমান ফিলিস্তিন, ইয়ামান, জর্দান, লেবানন, অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলও এই শাম অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলে রাসূল সা.-এর যুগে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে বৃহত্তর শামে মুসলমানদের বিজয়ের পথ সুগম করেছিল। যুদ্ধ দুটি হলো—মুতার যুদ্ধ এবং তাবুক যুদ্ধ।

মুতার যুদ্ধ 

৬ষ্ঠ হিজরিতে কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি হয়। এর ফলে অবাধে চলাফেরা করার সুযোগ পান মুসলমানেরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাসূল সা. রোম, পারস্য, হাবশা, সিরিয়া ও ইয়ামানের সম্রাটদেরকে ইসলামের দাওয়াত-সম্বলিত পত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন।

৮ম হিজরির জুমাদাল উলা মোতাবেক ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে রাসুলুল্লাহ সা. হারিস বিন উমায়ের আযদী রা.-কে একটি পত্রসহ বুসরার শাসকের নিকট প্রেরণ করেন। এ সময় বালক্বা নামক স্থানে নিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন রোম সম্রাটের গর্ভণর শোরাহবিল বিন আমর গাসসানী। তিনি রাসূল সা,-এর দূত হারিস রা.-কে বন্দী করে হত্যা করেন।

রাষ্ট্রীয় দূত এবং সংবাদ বাহকদের হত্যা করার ব্যাপারটি সব চাইতে নিকৃষ্ট কাজ এবং জঘন্যতম অপরাধ। এ ধরণের কাজ ছিল যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। রাসূলুল্লাহ সা. যখন এ সংবাদ অবগত হলেন তখন মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ ছাড়া পাল্টা জবাব দেওয়ার মতো আর কোন পথ খোলা ছিল না। 

যুদ্ধের জন্য রাসূল সা. ৩০০০ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী তিনি প্রস্তুত করলেন। সৈন্যদলের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন জায়েদ বিন হারিসা রা.। সৈন্যদলের জন্য সাদা পতাকা বেঁধে তা যায়েদের হাতে দিলেন। অসিয়ত করলেন যে—

জায়দ যদি শহীদ হয় তবে জাফর ইবনে আবি তালিব সেনাপতি হবেন। জাফর ইবনে আবি তালিব শহীদ হলে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবেন। আব্দুল্লাহ শহীদ হলে তোমরা উপস্থিত লোকদের মধ্যে উপযুক্ত কাউকে সেনাপতি বানিয়ে নেবে।

তিনি আরও বললেন, যে জায়গায় হারিস বিন উমায়েরকে শহীদ করা হয়েছে, সেখানকার  অধিবাসীদের প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দিবে। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সেটা হবে উত্তম। অন্যথায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তিনি আরও বললেন—

আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে, আল্লাহর সঙ্গে কুফরকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। সাবধান! অঙ্গীকার ভঙ্গ কর না, আমানতের খিয়ানত কর না, শিশু মহিলা, বৃদ্ধ এবং গীর্জায় অবস্থানরত পুরোহিতদের হত্যা কর না,খেজুর কিংবা অন্য কোন বৃক্ষ কর্তন কর না এবং বাড়ি ঘর ও দালানকোঠা বিনষ্ট কর না।

এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ৩ হাজার সৈন্যের বিপরীতে রোমানদের ছিল প্রায় ২ লাখ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী।

যুদ্ধটি শামের (সিরিয়া) উরদুন অঞ্চলের ‘বালকা’ নামক স্থানের নিকটবর্তী মুতা জনপদে সংঘটিত হয়েছিল।

যুদ্ধে রাসূল সা.-এর নির্ধারণ করে দেওয়া তিন সেনাপতিই শহীদ হন। তখন সবার পরামর্শে খালেদ বিন ওয়ালিদ রা. যুদ্ধের সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর হাতেই বিজয় অর্জিত হয়।  তাঁর নয়টি তরবারি ভেঙ্গেছিল এই যুদ্ধে।

মুসলিম বাহিনীর সীসাঢালা ঐক্য, অপূর্ব বীরত্ব, অভূতপূর্ব শৌর্য-বীর্য, নিখাদ শাহাদাতপ্রিয়তা, খালেদের অতুলনীয় যুদ্ধ নৈপুণ্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে বিজয় সাধিত হয়। 

তাবুক যুদ্ধ

তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ৬৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বর্তমানে এটি সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবুক অঞ্চলের রাজধানী শহর। এটি জর্দান-সৌদি আরব বর্ডারের কাছাকাছি অবস্থিত। সৌদি আরবের বিমানবাহিনীর সবচেয়ে বৃহৎ আবাসস্থল তাবুক শহরে অবস্থিত।

রোমানদের দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার পর মুতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেই যুদ্ধে রোমানরা মুসলমানদের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়েছিল। এর নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয় ও হুনায়েনের যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরে এলেন। এর কিছুদিন পর শাম (সিরিয়া) থেকে ফিরে আসা কতিপয় বণিক দলের কাছ থেকে খবর পেলেন, রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে শাম ও আরব সীমান্তে তারা এক বিশাল বাহিনী মোতায়েন করছে। 

এ খবরে মদিনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়; যদিও সাহাবায়ে কেরাম এযাবৎ বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তবু এ সবই ছিল জাজিরাতুল আরবের ভেতরে। কোনো বহিঃশত্রু বা রাজকীয় বাহিনীর মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তা ছাড়া রোম ছিল তৎকালীন দুনিয়ার বৃহৎ শক্তি। 

মুসলমানরা পর পর যুদ্ধে বিপর্যস্ত ছিল। একইসঙ্গে এটা ছিল মদিনায় সফল পাকার সময়। তবুও রাসূল সা.-এর নির্দেশে সবাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। নবী করিম (সা.) ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির এক বাহিনী নিয়ে তাবুক অভিমুখে রওনা হন। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এই দুঃসাহসিক অভিযানের কথা জানতে পেরে কালবিলম্ব না করে সেখান থেকে তাঁর বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। 

নবীজি সা. যখন তাবুকে গিয়ে পৌঁছলেন তখন রোমানদের সঙ্গে মুসলমানদের বিপক্ষে যুদ্ধে প্রস্তুত অন্যান্য শক্তিগুলো রাসূল সা. এর সাথে সন্ধি করতে এবং জিযিয়া-কর প্রদান করতে রাজি হলো। রাসূল সা. তাদের সঙ্গে  লিখিত চুক্তি করলেন। চুক্তির বিষয় বস্তু ছিল এমন—

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহ তায়ালা এবং আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সা.- এর পক্ষ থেকে ইউহান্না বিন রুবা এবং আয়লার অধিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য এই চুক্তিপত্র লিখা হচ্ছে। জলে ও স্থলে চলাচলকারী তাদের যানবাহন ও নৌকাগুলো আল্লাহ এবং নবী মুহাম্মাদের হেফাজতে ও যিম্মায় থাকবে। সিরিয়া, ইয়ামান ও বাহরাইনের যে সমস্ত লোক তাদের সাথে থাকবে, তাদের কাফেলাতেও এই নিরাপত্তার চুক্তি কার্যকর হবে। তাদের কেউ যদি চুক্তিবিরোধী কোন কাজ করে বা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে তার মাল তার জান বাঁচাতে পারবো; বরং যে কোন মুসলিমের জন্যই তাদের জান-মাল হালাল হয়ে যাবে। মুসলমানদের জন্য বৈধ নয় যে, কোন পানির ঘাটে অবতরণ করতে তাদেরকে বাধা দিবে, জল বা স্থল পথে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

হজরত ওমরের কথার পর যেসব আয়াত নাজিল হয়েছিল

news image

বায়তুল মুকাদ্দাসের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন যে নবীর মা

news image

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য যেসব আমল করতে পারেন

news image

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের দোয়া

news image

যে ধরনের অক্ষমতায় রোজার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়া যায়

news image

রোজা রেখে মিথ্যা বললে যে ক্ষতি হবে

news image

রমজানে দুর্ব্যবহার মুক্ত থাকতে হাদিসে যা বলা হয়েছে

news image

রমজানের ফজিলত ও বরকত নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

news image

মৃত্যুর পর শিশুরা কি জান্নাতে যায়?

news image

সারাদিন শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া

news image

যে নফল নামাজগুলো আল্লাহর প্রিয়

news image

তিন তাসবিহ কী? পড়লে যে ফজিলত

news image

জান্নাত ও জাহান্নাম দেখার পর মানুষের যে অনুভূতি হবে

news image

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আরও বাড়লো

news image

শাম অঞ্চলে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে যে সাহাবিরা শহিদ হয়েছেন

news image

শাম অঞ্চলে রাসূল (সা.) এর যুগে যে দুই যুদ্ধ হয়েছিল

news image

কাজা নামাজ পড়ার সময় কিরাত জোরে পড়া যাবে?

news image

সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়েছিল যেভাবে

news image

ফরজ গোসল দেরিতে করা কি ঠিক?

news image

যে তাকবির ধ্বনিতে আনন্দ প্রকাশ করছেন সিরিয়ানরা

news image

আল্লাহর প্রশংসামূলক বিশেষ কিছু বাক্য

news image

দেনমোহর নির্ধারণ না করেই স্বামী মারা গেলে করণীয়

news image

নারীদের আতর-সুগন্ধি ব্যবহার নিয়ে ইসলাম যা বলে

news image

নামাজের পর মসজিদ বন্ধ রাখা কি ঠিক?

news image

পবিত্র কাবা ঘরের ভেতর দেখতে কেমন? কী আছে সেখানে?

news image

শুকনো কাপড়ে অপবিত্র ভেজা কাপড় লাগলে করণীয়

news image

বিজয় আমাদেরই হবে ইনশাআল্লাহ: আজহারী

news image

সম্পদ ও জ্ঞানের সঠিক ব্যবহারকারী সম্পর্কে যা বলেছেন প্রিয়নবী সা.

news image

পাপী বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন

news image

জান্নাতে গিয়েও মানুষ যে কারণে আফসোস করবে