শনিবার ৩১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
রাজনীতি

জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপিকে নিয়ে ভারত কী ভাবছে ?

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৭ এ.এম

জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপিকে নিয়ে ভারত কী ভাবছে ? ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, তারা বাংলাদেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই রেখেছে’- মানে শুধু একটি দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ছিল, আর সেটা আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপিকে নিয়ে ভারতের যে কোনও কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।

দিল্লির নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন- অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভাল ছিল না। দু’পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী। যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায়। কিন্তু তাই বলে তাদের ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনও যুক্তি নেই।

২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রথমবারের মতো ভারতের ক্ষমতায় আসে, বিএনপির তরফে সম্পর্কের এই শীতলতা দূর করার একটা সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সম্ভবত বিএনপির ধারণা ছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ঐতিহাসিক একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের শাসনের অবসানের পর দক্ষিণপন্থী বিজেপির সঙ্গে বিএনপির মধ্যে একটা নতুন সমীকরণের সূচনা হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে তাতে দিল্লির দিক থেকে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া মিললেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্কও সেভাবে গড়ে উঠেনি। উল্টোদিকে প্রায় রেকর্ড সময়ের মধ্যে জমাট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদী আর শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ বা ব্যক্তিগত রসায়ন, মজবুত হয়েছে দুই সরকারের সম্পর্ক। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থনের ঘটনাও দিল্লির প্রতি বিএনপির অবিশ্বাসকে বদ্ধমূল করেছে।

কিন্তু ২০২৪-র ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে গেছে, সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে একটা বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করেছে।

দিল্লির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই। কারণ আওয়ামী লীগের চট করে রাজনৈতিক কামব্যাকের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে। তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, বিএনপির সঙ্গে ভারতের এতকাল কোনো যোগাযোগ ছিল না, এই কথাটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন এটা একটা ভুল ধারণা! এই ধারণাটা তৈরি হওয়ার কারণ আওয়ামী লীগ একটা খুব লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল। তো ওই পুরো সময়টা আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট লেভেলে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ডিল করব, তাই না? তার মানে এই না যে, অন্য কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা ডিল করতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না! বরং ভালোই ছিল।

তিনি বলেন, আমি নিজে হাইকমিশনার হিসেবে অনেকবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি, বহুবার তাদের বলেছি যে আপনারা ক্ল্যারিফাই করুন। এরকম কনভার্সেশন আমাদের অনেক হয়েছে। এছাড়া সেখানকার তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের যে ডেলিগেশন ভারতে আসত, তাতে বিরোধী দল ও বিএনপির এমপিরা সব সময় থাকতেন। কাজেই এটা বলা ভুল, আমরা ওদের সঙ্গে কথাই বলতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না। তবে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যে ঠিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, এ কথাটা দু’দেশে সকলেই জানেন ও মানেন।

বিজেপির সিনিয়র নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান শমীক ভট্টাচার্যর বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক, বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মানুষ যাকে চাইবে সেই দেশে, আমরা তাকে বেছে নেবে। কিন্তু মৌলবাদ থেকে সরতে হবে।

এদিকে জামায়াত-ই-ইসলামী বিএনপির সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। আর এই কারণে দিল্লির এখন একটা সম্পর্ক স্থাপনের ভাল সুযোগ বলে মনে করছেন ভারতের কূটনীতিকরা।

এই বিষয়ে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, ডেফিনিটলি জামায়াত আর বিএনপির মতবিরোধগুলো এখন খুব স্পষ্ট। ওনাদের একজন বড় নেতা এটাও বলেছেন যে কোনও অ্যালায়েন্স হওয়া সম্ভব না। আমি নিশ্চিত, এই ডেভেলপমেন্টগুলো ভারত সরকার নিজেদের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং অ্যাসেস করছে।

জামায়াতের ইসলামীর ব্যাপারে বিজেপির এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা স্পষ্টতই জামাতের চিন্তাভাবনা, তালেবানেইজেশনের কনসেপ্টের ঘোরতর নিন্দা করি। এটার বিরোধিতা আমরা করছি এবং করেও যাবো।

তিনি আরও বলেন, ভারতের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা এখনও একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে তাদের যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ‘শর্ত’ হতে হবে; জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সঙ্গ তাদের ত্যাগ করতেই হবে।

অন্যদিকে বিএনপি ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় অস্বস্তির জায়গাটা হল ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা। 

ভারত বিশ্বাস করে, ওই সময় আলফাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢালাও আশ্রয় পেয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলফার জন্য ট্রাকে করে অস্ত্র পাচারের ঘটনাও এই সময়কারই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি আবার মনে করেন, নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে বিএনপির সেই পুরনো রেকর্ড ‘অবশ্যই বদলাতে পারে’ এবং ভারতও তখন উপযুক্ত সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।

এছাড়া ভারতের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি বাংলাদেশে ‘প্রশ্রয়’ না পায়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বহাল থাকে। তাহলে বিএনপির সঙ্গে ‘ডিল’ করতেও ভারতের কোনও সমস্যা নেই।

এইদিকে নির্বাচন নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক; ভারত নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না। যদিও করে তাহলে অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।

এই মুহুর্তে ভারতের কৌশলটাই- বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে চাপ দেওয়া এবং তাতে যারাই জিতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ তৈরির পথ প্রস্তুত করে রাখা।

বিজেপির রাজ্যসভা এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তার বেশি থাকবে। এটাই কাঙ্ক্ষিত ও এটা হওয়াই স্বাভাবিক।

সোর্স/বিবিসি বাংলা

তথ্য সুত্র: ইত্তেফাক


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে একক দলের ভাবা উচিত নয়’

news image

ছাত্রদল সভাপতির পদ হারানোর খবরটি ভুয়া: সাধারণ সম্পাদক নাছির

news image

ড. ইউনূস জাপানে বসে বিএনপি সম্পর্কে বদনাম করছেন: মির্জা আব্বাস

news image

আ. লীগকে বাংলাদেশে কখনো রাজনীতি করতে দেয়া হবে না: আমান

news image

শৃঙ্খলা পরিপন্থি কেউ কিছু করলে সংগঠন কোনো দায় নেবে না: জামায়াত আমির

news image

দেশে আসো না কেন বেপ্লবি ভিউ ব্যবসায়ী বাটপাররা: নুর

news image

কোনো দেশেই সংস্কারের নামে সবকিছু থেমে যায় না : ফখরুল

news image

নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে : তারেক রহমান

news image

মেট্রো স্টেশনে জাল নোট দিয়ে টিকিট কেনার চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

news image

আমি এখন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক: এটিএম আজহার

news image

নয়াপল্টনে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ দুপুরে

news image

কারামুক্ত হলেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম

news image

সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চাইলেন জামায়াত আমির

news image

প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে নির্বাচন রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি

news image

বিএনপি গণতন্ত্রের লড়াইয়ে রয়েছে : গয়েশ্বর

news image

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যুক্তি তুলে ধরতে তারেক রহমানের নির্দেশনা

news image

এক বাথরুমে স্ত্রীসহ ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের

news image

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে রাজনৈতিক সংকট বাড়বে: ওয়াকার্স পার্টি

news image

মুফতি আমীর হামজাকে সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করল জামায়াত

news image

মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে রিট করেছেন ইশরাক

news image

জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য ও ডাকাতি মামলা

news image

আ.লীগ আমলের সব নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার দাবি এনসিপির

news image

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি

news image

উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই : নাহিদ

news image

ড. ইউনূস থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে জনগণ: সালাহউদ্দিন আহমেদ

news image

আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে: নাহিদ

news image

দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি: আমিনুল হক

news image

আমি বিএনপির প্রার্থী হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছি: ইশরাক

news image

রাস্তা ছাড়বেন না, আরও বিস্তৃত করতে হবে: ইশরাক

news image

জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার আর বাকি ২১ কর্মদিবস: হাসনাত