পিআর নয় বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতিতেই আস্থা রাখতে চায় বিএনপি: ডা. জাহিদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি কোনো অবস্থাতেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়। কোনো অবস্থাতেই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে জনগণের ওপর কোনো সিস্টেম (পিআর) চাপিয়ে দিতে পারেন না কেউই। তাই পিআর পদ্ধতি নয় দেশের বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতিতেই আস্থা রাখতে চায় বিএনপি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সদ্য প্রয়াত জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর স্মরণে শোকসভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন পিআর পদ্ধতি নিয়ে এ কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, যারা পিআর পদ্ধতির কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চান তাদের আহ্বান জানাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে পরবর্তীতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করবেন, তার আগে নয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।যারা পিআরের কথা বলছেন, তাদেরেকে জনগণের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে শোক সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল  ইসলাম মিজু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এ সময় বক্তারা প্রয়াত বিএনপি নেতা লাকুর সংগ্রামী ও ত্যাগের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের কথা তুলে ধরেন। লাকুর ত্যাগ ও আদর্শকে বিবেচনায় রেখে রাজনীতি করারও আহ্বান জানান বক্তারা।

শোকসভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, তারা (এনসিপি) তাদরে প্রতীকের জন্য দাবি জানাতে পারে। অন্য প্রতীক নিয়ে যে প্রতীক বছরের পর বছর রয়ে গেছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন নির্বাচনে যে প্রতীকে ভোট হয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে। সে প্রতীক নিয়ে তারা যে অবজেকশন দিয়েছে। সেটা খুব একটা ভালো দেখাচ্ছে না। মানুষও ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। তারা তাদের দাবি জানাতেই পারে। তাদের দাবি মানবে কিনা সেটা ইলেকশন কমিশনের ব্যাপার। সে বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। অন্য প্রতীক নিয়ে অবজেকশন দেওয়াটা ঠিক নয়। এটা শোভন নয়।

তিনি জোর দিয়ে বলেন,  কোনো অবস্থাতেই আমরা জাতীয়তাবাদী দল পিআর পদ্ধতিতে বিশ্বাসী নয়। যারা আজকে পিআর এর কথা বলছেন। তারা জনগণের কাছে যান। জনগণ যেটা গ্রহণ করবে সেটা হবে। জনগণের কথা বলে আপনি কোনো সিস্টেম জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে।

তিনি আরও বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হবে। জনগণ তার নেতাকে তার ত্যাগ ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নির্বাচিত করতে চান তার এলাকা থেকে। কোন সংখ্যার অনুপাতে নয়।

শুধু তাই নয় বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। তাই পিআর পদ্ধতি নয় দেশের বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতিতেই আস্থা রাখতে চায় বিএনপি। এক শ্রেণির লোক নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে এই পদ্ধতির দাবি তুলছেন। যারা জনগণের নাম করে পিআর পদ্ধতি নিয়ে মাঠে লড়াই করছে তাদের নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে গিয়ে পরবর্তীতে পিয়ার বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই।

এ সময় দলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার যখন সময় আসবে। তখন বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড যথাসময়ে দলীয় মনোনয়ন দিবে। এটি নিয়ে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। অথবা মনে করার কারণ নাই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন নাই। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এর হাজার হাজার প্রার্থী আছে। বিএনপি দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এর আগে নেতৃবৃন্দ নগরীর নুরপুরে প্রয়াত বিএনপি নেতা আনিছুর রহমান লাকুর কবর জিয়ারত শেষে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন ও তাদের খোঁজ খবর নেন।

আগামী ১৪ অক্টোবর দলের রংপুর জেলা সম্মেলনের দাওয়াত দিয়ে ৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে রংপুর ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বগুড়ার শেরপুরে আকালে মৃত্যুবরণ করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু। ২০১৩ সালে তাকে গুম করে জয়পুরহাটে নেয়া হয়েছিল। এছাড়াও তিনি দশ বছরের  মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি ছিলেন দীর্ঘদিন। অসংখ্য মামলা হয়েছিল বিগম সরকার  আমলে। স্বজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল রংপুর অঞ্চলে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।