রবিবার ০১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

দাফনে পুলিশের সময় বেঁধে দেওয়ায় ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতে পারেননি মা

নিজস্ব প্রতিবেদন ২৬ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৮:০৬ এ.এম

দাফনে পুলিশের সময় বেঁধে দেওয়ায় ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতে পারেননি মা ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে একপর্যায়ে হাজারো ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। বসে থাকেননি টগবগে তরুণ মো. ছাব্বির মল্লিকও।

আন্দোলনে যোগ দিতে ছাব্বির মল্লিক (২০) এইচএসসির দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ১৭ জুলাই ঢাকায় চলে যান। যাওয়ার আগে মাকে বলেন, বোনের বাচ্চাদের জন্য তার খুব মন পুড়ছে। তাদের দেখতে ইচ্ছে করছে।

বড় বোন ফারহানা শারমিন গাজীপুরে বসবাস করেন। ছাব্বির এসে তার বাসায় ওঠেন। ভাগনা-ভাগনিদের জন্য ‘মজা’ কিনতে যাওয়ার কথা বলে ১৯ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু আর ফিরে আসেননি।

ছাব্বির এমন এক তরুণ ছিলেন, যেখানেই আন্দোলন, প্রতিবাদ সেখানেই তার সরব উপস্থিতি ছিল। তিনি ছিলেন খুবই মানবিক। নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে গরিব অসহায়দের সাহায্য করতেন। তার দাদা, বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তাই তারও স্বপ্ন ছিল একদিন তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ও সাধ আর পূরণ হলো না।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. শহিদুল মল্লিক (৫৭) ও গৃহিণী কাকলি বেগমের (৫৩) চার সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ছাব্বির মল্লিক ছিলেন স্থানীয় শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিন বোনের এক ভাই ছিলেন ছাব্বির।

তিনি ১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। সেদিন বিকেলে পুলিশের গুলিতে আহত হলে তাকে সহযোদ্ধারা উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে রাত ১০টায় হাসপাতাল থেকে বড় বোনকে ফোন দেওয়া হয়। তারা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ।

ছাব্বিরের বাবা ঢাকায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে গার্ডের চাকরি করতেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তিনি। ওই রাতেই ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসার পথে আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী ‘ছাত্রলীগ’ তাদের ওপর হামলা চালায়। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। লাশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে। সে এক ভয়াবহ ও নিষ্ঠুরতম ঘটনা, যা ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর নির্মমতাকেও হার মানায়।

ছেলের লাশ বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে ছাব্বিরের পিতা ও বোনকে ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হয়। গোপালগঞ্জের মোল্লাহাট ব্রিজ পর্যন্ত এ বাধার মুখে পড়েন তারা।

এ প্রসঙ্গে বড়ো বোন ফারহানা শারমিন (৩১) বলেন, উত্তরা থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্তই আমরা ২০ থেকে ২৫ বারের মতো বাধার মুখে পড়ি। এরপরও কিছু সময় পর পরই আমাদের গাড়ি আটকে দেয়া হচ্ছিল। আর বলছিল, আমরা যেন লাইট না জ্বালাই, হর্ন না বাজাই।

এদিকে হিজলা বাজার থেকে কানন চক বাজার পর্যন্ত সাদা পোশাকে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। পুলিশ নির্দেশ দেয়, অল্প সময়ে মধ্যেই জানাজা ও দাফনের কাজ শেষ করতে হবে। এমনকি ছাব্বিরদের গ্রামের বাড়িতে হামলারও প্রস্তুতি চলে।

গত ২০ জুলাই রাত ৩টায় লাশ এসে বাড়ি পৌঁছায়। কোনো রকমে তড়িঘড়ি করে গোসল দেওয়া হয়। জানাজা শেষে রাত ৪টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ ছাব্বিরকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ফারহানা কালবেলাকে বলেন, লাশ নিয়ে আসার পর পুলিশ মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে দাফন, জানাজা সব শেষ করতে বলে। আমার দুঃখিনী মা-ছেলের মুখটাও ঠিক মতো দেখার সুযোগ পাননি।

শহীদ ছাব্বিরের মা এখনও শোকে বিহ্বল। ‘ছেলে আমরা লেখাপড়া শিখে সেনা কর্মকর্তা হবে, অথচ তাকে মেরা ফেলা হলো’ এই বলে বার বার আহাজারি করছিলেন।

ছাব্বিরের তিন বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা শহীদুল মল্লিক খুবই গরীব। একমাত্র ছেলের অকাল প্রয়াণে সিকিউরিটির চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছেন। পেনশনের টাকায় কোনো রকম সংসার চলছে।

শহীদুল মল্লিক জানান, তারা ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকার চেক, সমাজকল্যাণ চিতলমারী অফিস থেকে ৫ হাজার টাকার চেক, মোল্লাহাটের স্থানীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদের কাছ থেকে ২৫ হাজার ও এক আমেরিকান প্রবাসীর কাছ থেকে ৯ হাজার টাকার সাহায্য পেয়েছেন।

এদিকে ছাব্বিরের বাবা গত ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। এছাড়া নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম আরিফ শহিদ ছাব্বিরের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। তবে প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কেউ পরিবারটির কোন খোঁজ নেয়নি।

ছাব্বিরের পিতা-মাতা বর্তমানে ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা এখনও সারাদিন কান্নাকাটি করেন। তাই ছাব্বিরের বড়ো বোন শারমিন কিছুদিনের জন্যে পিতামাতাকে সঙ্গ দিতে গাজীপুর থেকে বাড়ি গেছেন।

পরিবারের সবাই ছাব্বির হত্যায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

যারা চোরা পথে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা নির্বাচন চায় না: মঈন খান

news image

ছেলে-মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাস করলেই ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান

news image

চট্টগ্রামে শিবিরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল: রাফি

news image

অনেক বিপদ ও ঝড় ঝাপটা এসেছে, কিন্তু বিএনপিকে ছেড়ে যাইনি: রিতা

news image

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

news image

যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস

news image

মধ্যরাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর ও লুটপাট

news image

মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীর জিম্মায় ছাড়া পেলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

news image

রশনির রক্তমাখা ব্যাগ জড়িয়ে কাঁদছেন মা

news image

দাবি আদায়ে সচিবালয় অবরুদ্ধ করা কাম্য নয়: চরমোনাই পীর

news image

সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয়ের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

news image

লন্ডনে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ

news image

পুলিশভ্যান থেকে ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিলেন শ্রমিক দল নেতা

news image

বিয়ের ৫ বছর পর একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম

news image

৬ দিনের রিমান্ডে মমতাজ

news image

রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই

news image

চাঁদা না দেওয়ায় চালককে ‘মারধরের পর থুতু চাটালেন’ সাবেক ছাত্রদল নেতা

news image

হাসপাতালে গিয়ে খায়রুল বাসার বললেন, আজন্ম এক নায়ক মনু মিয়া

news image

টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনাসহ ১৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

news image

রামপুরায় হিউম্যান এইড'র মানবিক সহায়তার দোকান উদ্বোধন

news image

শেরপুরে নদীর বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত

news image

৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়ার ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা

news image

লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে ২৩ সেকেন্ডে ২১টি বেত্রাঘাত, ভিডিও ভাইরাল

news image

১৬ ইঞ্চির কলাগাছে ৭ মোচা, এলাকায় চাঞ্চল্য

news image

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি মমতাজ

news image

আ.লীগ কর্মী এখন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী!

news image

মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

news image

প্রাইমারি পাস না করেও অপারেশন করেন ‘ডাক্তার’ রশিদা

news image

‘ভারত পানিকে মারণাস্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে’

news image

পেটে বাচ্চাসহ গরু জবাই, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা