সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

দাফনে পুলিশের সময় বেঁধে দেওয়ায় ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতে পারেননি মা

নিজস্ব প্রতিবেদন ২৬ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৮:০৬ এ.এম

দাফনে পুলিশের সময় বেঁধে দেওয়ায় ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতে পারেননি মা ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে একপর্যায়ে হাজারো ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। বসে থাকেননি টগবগে তরুণ মো. ছাব্বির মল্লিকও।

আন্দোলনে যোগ দিতে ছাব্বির মল্লিক (২০) এইচএসসির দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ১৭ জুলাই ঢাকায় চলে যান। যাওয়ার আগে মাকে বলেন, বোনের বাচ্চাদের জন্য তার খুব মন পুড়ছে। তাদের দেখতে ইচ্ছে করছে।

বড় বোন ফারহানা শারমিন গাজীপুরে বসবাস করেন। ছাব্বির এসে তার বাসায় ওঠেন। ভাগনা-ভাগনিদের জন্য ‘মজা’ কিনতে যাওয়ার কথা বলে ১৯ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু আর ফিরে আসেননি।

ছাব্বির এমন এক তরুণ ছিলেন, যেখানেই আন্দোলন, প্রতিবাদ সেখানেই তার সরব উপস্থিতি ছিল। তিনি ছিলেন খুবই মানবিক। নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে গরিব অসহায়দের সাহায্য করতেন। তার দাদা, বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তাই তারও স্বপ্ন ছিল একদিন তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ও সাধ আর পূরণ হলো না।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. শহিদুল মল্লিক (৫৭) ও গৃহিণী কাকলি বেগমের (৫৩) চার সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ছাব্বির মল্লিক ছিলেন স্থানীয় শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিন বোনের এক ভাই ছিলেন ছাব্বির।

তিনি ১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। সেদিন বিকেলে পুলিশের গুলিতে আহত হলে তাকে সহযোদ্ধারা উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে রাত ১০টায় হাসপাতাল থেকে বড় বোনকে ফোন দেওয়া হয়। তারা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ।

ছাব্বিরের বাবা ঢাকায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে গার্ডের চাকরি করতেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তিনি। ওই রাতেই ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসার পথে আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী ‘ছাত্রলীগ’ তাদের ওপর হামলা চালায়। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। লাশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে। সে এক ভয়াবহ ও নিষ্ঠুরতম ঘটনা, যা ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর নির্মমতাকেও হার মানায়।

ছেলের লাশ বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে ছাব্বিরের পিতা ও বোনকে ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হয়। গোপালগঞ্জের মোল্লাহাট ব্রিজ পর্যন্ত এ বাধার মুখে পড়েন তারা।

এ প্রসঙ্গে বড়ো বোন ফারহানা শারমিন (৩১) বলেন, উত্তরা থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্তই আমরা ২০ থেকে ২৫ বারের মতো বাধার মুখে পড়ি। এরপরও কিছু সময় পর পরই আমাদের গাড়ি আটকে দেয়া হচ্ছিল। আর বলছিল, আমরা যেন লাইট না জ্বালাই, হর্ন না বাজাই।

এদিকে হিজলা বাজার থেকে কানন চক বাজার পর্যন্ত সাদা পোশাকে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। পুলিশ নির্দেশ দেয়, অল্প সময়ে মধ্যেই জানাজা ও দাফনের কাজ শেষ করতে হবে। এমনকি ছাব্বিরদের গ্রামের বাড়িতে হামলারও প্রস্তুতি চলে।

গত ২০ জুলাই রাত ৩টায় লাশ এসে বাড়ি পৌঁছায়। কোনো রকমে তড়িঘড়ি করে গোসল দেওয়া হয়। জানাজা শেষে রাত ৪টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ ছাব্বিরকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ফারহানা কালবেলাকে বলেন, লাশ নিয়ে আসার পর পুলিশ মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে দাফন, জানাজা সব শেষ করতে বলে। আমার দুঃখিনী মা-ছেলের মুখটাও ঠিক মতো দেখার সুযোগ পাননি।

শহীদ ছাব্বিরের মা এখনও শোকে বিহ্বল। ‘ছেলে আমরা লেখাপড়া শিখে সেনা কর্মকর্তা হবে, অথচ তাকে মেরা ফেলা হলো’ এই বলে বার বার আহাজারি করছিলেন।

ছাব্বিরের তিন বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা শহীদুল মল্লিক খুবই গরীব। একমাত্র ছেলের অকাল প্রয়াণে সিকিউরিটির চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছেন। পেনশনের টাকায় কোনো রকম সংসার চলছে।

শহীদুল মল্লিক জানান, তারা ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকার চেক, সমাজকল্যাণ চিতলমারী অফিস থেকে ৫ হাজার টাকার চেক, মোল্লাহাটের স্থানীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদের কাছ থেকে ২৫ হাজার ও এক আমেরিকান প্রবাসীর কাছ থেকে ৯ হাজার টাকার সাহায্য পেয়েছেন।

এদিকে ছাব্বিরের বাবা গত ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। এছাড়া নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম আরিফ শহিদ ছাব্বিরের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। তবে প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কেউ পরিবারটির কোন খোঁজ নেয়নি।

ছাব্বিরের পিতা-মাতা বর্তমানে ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা এখনও সারাদিন কান্নাকাটি করেন। তাই ছাব্বিরের বড়ো বোন শারমিন কিছুদিনের জন্যে পিতামাতাকে সঙ্গ দিতে গাজীপুর থেকে বাড়ি গেছেন।

পরিবারের সবাই ছাব্বির হত্যায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বাঙালি বিয়ে খেতে পাবনায় রুশ তরুণী

news image

আ.লীগ-জামায়াত নেতার হামলায় বিএনপির ৬ নেতা আহত

news image

সুদের টাকার জন্য নারীকে মারধর, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা

news image

ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি

news image

তরমুজ সাদা হওয়ায় বিক্রেতাসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম

news image

এসএসসির হলে ঢুকে ছাত্রীদের পানি পান করানোয় ছাত্রদল নেতার সমালোচনা

news image

এসএসসির হলে ঢুকে ছাত্রীদের পানি পান করানোয় ছাত্রদল নেতার সমালোচনা

news image

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

news image

নড়াইলে আ.লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে

news image

পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে বাবার খাটিয়া কাঁধে নিল নাহিদ

news image

ভালোবাসার টানে ২৪ বছর পর আবারও বরগুনায় ডেনমার্কের রোমানা

news image

জয়পুরহাটে কারাগারে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিলো এক শিক্ষার্থী

news image

ক্রেতা সেজে নারী মাদক কারবারিকে ধরল পুলিশ

news image

‘আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরায় দেন, তারে দেশে নিয়া আসেন’

news image

মক্তবে শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা, ভয়ে বাড়ি ছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবার

news image

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার ‘মিথ্যা’ স্বাক্ষী গ্রেপ্তার

news image

ভালুকের শরীরে পচন, আ. লীগ নেতার সেই চিড়িয়াখানা সিলগালা

news image

জামিনে কারামুক্ত হওয়া সাবেক এমপি আজিজকে গণধোলাই

news image

লুটের জুতা বিক্রির জন্য ফেসবুকে পোস্ট

news image

খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ইমাম গ্রেপ্তার

news image

সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ঘুরিয়ে বলল পুলিশ, অপরাধীদের পরিণতি হবে এমন

news image

বাটা শোরুমসহ দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

news image

ছাত্র প্রতিনিধিদের এখন সরকার থেকে পদত্যাগ করা দরকার : ভিপি নুর

news image

থানায় জিডি করতে ৩ প্যাকেট সিগারেটের দাম নিলেন এএসআই

news image

৮ জেলায় তাণ্ডব, ছবি সহ

news image

প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম কারাগারে

news image

সমিতির গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জামায়াত নেতা আটক

news image

এসএসসি পরীক্ষায় বসা হলো না সাকিবের

news image

শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন প্রধান বিচারপতি

news image

‘সংস্কারের চিন্তা বাদ দিয়ে নির্বাচনের পথে আসেন’