বুধবার ০৬ আগষ্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
রাজনীতি

‘নির্যাতনে ছাত্রলীগের অংশীদার হতেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা’, ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের দিলেন তাঁদের পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদন ০৪ আগষ্ট ২০২৫ ১১:৫৫ এ.এম

‘নির্যাতনে ছাত্রলীগের অংশীদার হতেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা’, ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের দিলেন তাঁদের পরিচয় ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের। ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রলীগের হয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়নে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

গতকাল রোববার রাতে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যে সদস্যরা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করতেন, তাঁরা মূলত ‘আত্মপরিচয়ের সংকট’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াতেন। নিজেকে ছাত্রলীগ প্রমাণ করার দায় থেকেই তাঁরা ছাত্রলীগের নিপীড়ন-নির্যাতনের অংশীদার হতেন এবং ছাত্রলীগের সংস্কৃতিই চর্চা করতেন।

আবদুল কাদের আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো এমন কয়েকজনের বিষয়ে শিবিরের তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ফোন কল দিয়ে তদবিরও করেছিলেন।

যাঁদের বিষয়ে অভিযোগ

আবদুল কাদের তাঁর পোস্টে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন:

মাজেদুর রহমান (বিজয় একাত্তর হল) : ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী শাহরিয়াদকে রাতভর মারধরের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। আবদুল কাদেরের দাবি, তিনি একই মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে জানতেন মাজেদুর ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে ‘ভয়ংকর নিপীড়ক’ হয়ে ওঠেন।

মুসাদ্দিক বিল্লাহ (ঢাবি ছাত্রলীগ দপ্তর সম্পাদক) : ২০১৭-১৮ সেশনের এই নেতাকে আবদুল কাদের তাঁর জেলার বলে উল্লেখ করেছেন, যাঁর পরিবার জামায়াতপন্থী এবং তিনি নিজেও শিবিরের সাথী ছিলেন। তবে ‘পদ-পদবির জন্য তিনি কট্টর ছাত্রলীগ’ হয়ে ওঠেন এবং পূর্বে কোনো কমিটিতে না থেকেও সরাসরি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ পান।

আফজালুন নাঈম (জসীমউদ্‌দীন হল) : ২০১৬-১৭ সেশনের এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গেস্টরুমে দুর্ব্যবহার ও নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন আবদুল কাদের। তিনি উল্লেখ করেন, এই নাঈম এখন জামায়াত-শিবিরের ‘আইকন’ শিশির মনিরের বিশেষ সহকারী।

ইলিয়াস হোসাইন (মুজিব হল) : ২০১৬-১৭ সেশনের এই নেতা জুনিয়রদের কাছে ‘ত্রাসের নাম’ ছিলেন। মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ চাপ দিতেন, গেস্টরুমে ‘অসহ্য মেন্টাল টর্চার’ করতেন এবং ছাত্রলীগের পদও পেয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর এই ইলিয়াস ‘শিবিরের বড় নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং এখন শিবিরের ‘ইমামদের’ সঙ্গে চলাফেরা করেন।

মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল (মুহসীন হল) : ২০১৭ সালে ইসলামিক পেজে লাইক দেওয়ায় শিবির সন্দেহে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের মাধ্যমে হলছাড়া করার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩ ছাত্রলীগ নেতার একজন। আবদুল কাদেরের দাবি, শাহাদাত ‘শিবির হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত’ ছিলেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পর সাদিক কায়েম শাহাদাতকে নিয়ে পোস্টকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তদবির করেন।

হাসানুল বান্না (জহুরুল হক হল) : ২০২১-২২ সেশনের এই শিক্ষার্থীকে আবদুল কাদের ‘গুপ্ত শিবির’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যাঁরা ছাত্রলীগের হল ক্যান্ডিডেটদের পেছনে থেকে ‘তেলবাজি ও চাটুকারিতায় অনন্য’ ছিল। ৫ আগস্টের পর বান্না শিবিরের সদস্য সম্মেলনে গিয়ে নিজেকে সদস্য হিসেবে প্রকাশ করেন এবং এখন শিবিরের জহুরুল হক হল শাখার ‘বড় নেতা’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

রায়হান উদ্দিন (স্যার এ এফ রহমান হল) : ২০১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং হল ক্যান্ডিডেটের ‘একনিষ্ঠ অনুসারী’ ছিলেন। আবদুল কাদেরের দাবি, এই রায়হান ৫ আগস্টের পর শিবিরের ‘বড় নেতা’ হিসেবে হাজির হয়েছেন এবং তার আগের ফেসবুক আইডি মুছে ফেলেছেন।

হাসান সাঈদী (বিজয় একাত্তর হল) : আবদুল কাদেরের অভিযোগ, এই সাঈদী শিবিরের সাথী ছিলেন এবং পরে একাত্তর হল ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজেকে ‘লীগার’ প্রমাণ করতে তিনি ‘উগ্রপন্থা’ বেছে নেন এবং কাগজপত্রে নাম পরিবর্তন করে ‘সাঈদ’ রাখেন। অবশেষে তিনি একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক হন। আবদুল কাদের আরও উল্লেখ করেন, সাঈদীসহ কয়েকজন ছাত্রলীগার মিলে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তিন দিন আটকে রেখেছিলেন, যার জন্য তিনি গ্রেপ্তার ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। জুলাইয়ের ১৫ তারিখে ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে সাঈদী সেখানে গিয়েও আহতদের ওপর হামলা করেন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সাঈদী ক্যাম্পাসের বাইরে পরীক্ষা দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করেন। তখন শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সভাপতি সাদিক কায়েম তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তদবির করেন।

৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতি

আবদুল কাদের তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, শিবিরের কৌশলগত জায়গা থেকেই তাঁরা ছাত্রলীগের বড় পদ নিতেন। হল ক্যান্ডিডেট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট হওয়ার কারণে তাঁদের ছাত্রলীগের স্টাইল অনুসরণ করতে হতো। শিক্ষার্থীদের গণরুম, গেস্টরুম, জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজ তাঁরা ‘একিনের’ সঙ্গে করতেন, যার উদ্দেশ্য ছিল পদ পাওয়া।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি ও শৃঙ্খলা কমিটি হয় শিবিরের ‘প্রেসক্রিপশনে’। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটাভুটি করে অধিকাংশ ব্যাচ প্রতিনিধি শিবির নিজেদের লোকজনকে নির্বাচিত করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই পরবর্তীকালে ‘ছায়া প্রশাসন’ হিসেবে কাজ করে এবং ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের নামের তালিকা তৈরির দায়িত্ব নেয়, যেখানে তারা নিজেদের ‘সাথী ভাইদের’ তালিকার বাইরে রাখে।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে মাহিম সরকার ও আরমান হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। আবদুল কাদেরের অভিযোগ, এই দুই মামলার বাদীর সঙ্গে শিবিরের সাদিক কায়েম সরাসরি দেখা করে কয়েকজনের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তদবির করেন। আরমান পরবর্তীকালে খোঁজ নিয়ে দেখেন, সাদিক কায়েম যাঁদের নাম বাদ দিতে বলেছিলেন, তাঁরা শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

শিবিরের প্রতিক্রিয়া

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাদেরের সঙ্গে এসব বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। তিনি ফেসবুকে যেগুলো লিখেছেন, সেগুলো সত্য নয়। মামলার বিষয়ে আমি আরমানকে মেসেজ দিয়েছিলাম খোঁজ নিয়ে দেখতে, যেন কোনো নির্দোষ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হন।’

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের অভিযোগ, এই ‘তদবির-কাণ্ডের’ কারণে জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা করা যায়নি। তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সবাই সবার দলীয় মানুষজনকে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিয়ে দিছে। শিবির অস্বীকার করতেছে, তাদের কোনো নেতা-কর্মী গুপ্তভাবে লীগের ভেতরে ঢুকে লীগের কালচার চর্চা করেনি। তারা আমাদের কাছে প্রমাণ চাচ্ছে; কিন্তু শিবির তাদের বিগত এক যুগের হল কমিটি এবং ঢাবি শাখার কমিটি প্রকাশ করুক। তাহলেই তো মানুষজন ক্লিয়ার হতে পারে, শিবির ছিল কি ছিল না। বর্তমানের হল কমিটিও তো প্রকাশ করতে পারে। ৫ তারিখের পর তাদের ভয় কিসের? নাকি তাদের কৃতকর্ম প্রকাশিত হয়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রকাশ করতেছে না! হলে হলে এখন শিবিরের হয়ে মাদবরি করা মানুষের পূর্বের চেহারা প্রকাশ হয়ে যাবে!’

পোস্টের সঙ্গে সাদিক কায়েম যে মামলার বিষয়ে বাদীর কাছে তদবির করেছেন, সেই কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন আবদুল কাদের। এ ছাড়া কমেন্টে উল্লেখ করেছেন, ‘পোস্টে উল্লেখিত প্রতিটা ঘটনার তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। কিছু ঘটনার নিউজ আছে।’


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নির্বাচিত সংসদের বাইরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জানা নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ

news image

নিজামী হাসিনার জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার: মোমেন

news image

গণতন্ত্রের পথ সুগমে সরকারের সবাইকে তারেক রহমানের ধন্যবাদ

news image

পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি বিষয় জুলাই ঘোষণাপত্রে অনুপস্থিত : এনসিপি

news image

নির্বাচন ছাড়া কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করি না: মির্জা ফখরুল

news image

জামায়াত সেক্রেটারি ছাতার নিচে বিএনপি মহাসচিব

news image

বাংলাদেশে আরেকটি বিপ্লব লাগবে: সাদিক কায়েম

news image

পলাতক ফ্যাসিস্টদের এখনও অনুশোচনা নেই: রিজভী

news image

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন চরমোনাই পীর

news image

পালানোর আগে দিল্লির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন হাসিনা

news image

যেকোনো সময় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ

news image

‘নির্যাতনে ছাত্রলীগের অংশীদার হতেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা’, ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের দিলেন তাঁদের পরিচয়

news image

তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান

news image

নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন, সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছি: এনসিপি

news image

খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা

news image

ছাত্রদলের সমাবেশে অংশ নিতে আসছেন নেতাকর্মীরা

news image

শাহবাগের সমাবেশ থেকে ৩ বার্তা দেবে ছাত্রদল

news image

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্লাটফর্ম এখন বৈষম্য সৃষ্টির প্লাটফর্ম’

news image

তারেক রহমানের জন্য গুলশানে বাড়ি প্রস্তুত

news image

নগরভবনে বিরতিহীন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন ইশরাক

news image

ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি

news image

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে নিঝুম দ্বীপ হবে মালদ্বীপ’

news image

‘মায়ের সঙ্গে ঈদ করছেন জয়, কিন্তু লাখ লাখ নেতাকর্মী পরিবারছাড়া’

news image

গোটা জাতি লন্ডনের দিকে তাকিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সিদ্ধান্ত: রিজভী

news image

এক সপ্তাহে ১৩ লাখ টাকা গণচাঁদা সংগ্রহ এনসিপির

news image

খালেদা জিয়ার এক পরামর্শেই বদলে গেল রাজনৈতিক দৃশ্যপট

news image

ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকে কী কী আলোচনা হতে পারে, জানালেন প্রেস সচিব

news image

তরুণ ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে: জামায়াত আমির

news image

নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ ঘোষণাপত্র দিতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

news image

অন্য কোনো দেশ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করুক, এটা কাম্য নয়: জামায়াত আমির