রবিবার ০১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
শিক্ষা

শিক্ষাক্রমে ঘনঘন পরিবর্তন: বারবার হোঁচট খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৩ অক্টোবার ২০২৪ ১১:০৩ এ.এম

শিক্ষাক্রমে ঘনঘন পরিবর্তন: বারবার হোঁচট খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাক্রমে বারবার পরিবর্তনে বারবার হোঁচট খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতার পর দেশে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে সাত বার। এই সময়ে মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে তিন বার। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে গত দেড় দশকে। ১৯৭৭ সালে প্রথম শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পর ১৯৮৬ সালে পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন করা হয়। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে রূপান্তর করা হয়, ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক স্তরে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন করা হয়। পরে ২০০২ সালে প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের কিছু পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন করা হয়। এরপর ২০১২ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি। 

তবে এই শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে হুট করে ২০২৩ সাল থেকে অভিজ্ঞতানির্ভর মূল্যায়ন শুরু করেছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদদের গঠনমূলক সমলোচনা বা পরামর্শও গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন, শেখানোর পন্থা, মূল্যায়ন ব্যবস্থাসহ শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিই বদলে ফেলা হয়েছিল। সাধারণ ধারার স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেড় কোটির বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের এ পরিবর্তন অভিভাবকরা মেনে নিতে পারেননি। অভিভাবক মহলে তুমুল সমালোচিত নতুন শিক্ষাক্রম থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়, মূল্যায়ন নিয়ে অস্পষ্টতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবকে দায় দিয়ে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষাবিদরা বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একের পর এক শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে পালটে যায় শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো সময় শিক্ষকরাও সুস্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারেন না—কীভাবে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অভ্যস্ত করে তুলবেন। সেই সঙ্গে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অভিভাবকরাও। এ কারণে যথাযথ পাইলটিং ও গবেষণা করে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই আছে। সেই বই পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। কাজটি করছেন ৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর এনসিটিবি প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন এবং পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে ১০ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গঠিত কমিটি বাতিল করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপাখানায় দিতে হাতে সময় খুব কম। তাই এখন বড় পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাই এখন প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বই ছাপাতে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন, সেটা পরবর্তীকালে সময় নিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে আলোচিত সমালোচিত সেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সরকারের কত টাকা অপচয় হয়েছে তা জানতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবির একজন সদস্যের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। 

জানা গেছে, এতে অপচয় হয়েছে জনগণের শত শত কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরকার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের পুরো টাকাই অপচয় হয়েছে। এছাড়া কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য সেমিনার বাবদ খরচও অপচয়। নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বহু বছর ধরে চলে আসা শিক্ষাব্যবস্থায় হুট করে আমূল পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি জাতি। সংশ্লিষ্ট কারো কারো দাবি, পরামর্শ দেওয়া হলেও তা শুনেননি তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী। গঠনমূলক সমালোচনার চেয়ে তোষামদিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। পরামর্শ দিয়ে বিপাকেও পড়েছেন কেউ কেউ। শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষা ও আইন রাতারাতি পরিবর্তন কোনো সভ্যতাই গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য ব্রিটিশরা চলে গেলেও তাদের আইনকাঠামো আজও দেশে ব্যবহার হচ্ছে। তাদের হাত ধরে আসা শিক্ষা পদ্ধতি স্বাধীনতার পরও অর্ধশতাব্দী চর্চা করা হয়েছে। তাই শিক্ষাক্রমের রূপান্তর সমাজ যে গ্রহণ করবে না-তা অনেক আগেই অনুধাবন করেছিলেন এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। রূপরেখা প্রণয়ণের সময় ও পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিষয়টি তৎকালীন মন্ত্রীকে বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন। তবে বিনিময়ে পেয়েছিলেন বঞ্চনা আর তিরস্কার।

পাঁচ জন শিক্ষাবিদ ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীনতার ৫ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম কী হবে-তা এখনো দেশের বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় চলে যায়। এভাবে একের পর এক নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। 

তারা বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী কুদরাত-ই-খুদাকে প্রধান করে দেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেও ঐ শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর নানা সরকারের সময় সব মিলিয়ে কমপক্ষে আটটি শিক্ষা কমিশন ও কমিটি হলেও কোনোটিই আর আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ আমলে মজিদ উদ্দিন শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭ সালে শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ২০০২ সালে এমএ বারী কমিশন ও ২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান মিঞা কমিশন গঠন করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর (বর্তমানে প্রয়াত) নেতৃত্বে সর্বশেষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি হয়। ২০১০ সালের মে মাসে কমিটির সুপারিশ করা শিক্ষানীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। এ শিক্ষানীতির বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যেমন—প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়ন হয়নি, স্থায়ী শিক্ষা কমিশনও হয়নি।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

মাদ্রাসা-মাধ্যমিকের ছুটি শুরু আজ, প্রাথমিক-কলেজে ৩ জুন

news image

নিয়ম ভেঙে জাবির ছাত্র হলে ছাত্রীর প্রবেশ

news image

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগের 'অ্যালামনাই রিইউনিয়ন ২০২৫' অনুষ্ঠিত

news image

স্টামফোর্ডে আয়োজিত হলো মাদকবিরোধী সেমিনার

news image

জুমার নামাজের পর গণঅনশনে বসবে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

news image

জবিতে আনঅফিসিয়াল শাটডাউন, দুদিন পার হলেও অনড় শিক্ষক-শিক্ষার্থী

news image

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে জাবিতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

news image

শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর, বাড়লো উপবৃত্তি তথ্য পাঠানোর সময়

news image

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

news image

প্রাথমিক শিক্ষকদের জেলা থেকে জেলায় বদলি আবেদন শুরু

news image

৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

news image

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২

news image

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ

news image

এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই : শিক্ষাবোর্ড

news image

স্টামফোর্ডে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে গণমাধ্যমে কর্মরত শিক্ষার্থীদের ইফতার

news image

প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহর মৃত্যুতে ইউজিসির শোক

news image

এসএসসি পরীক্ষার সময় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

news image

তার্কিশ এয়ারলাইনসের ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য অফিসিয়ালি চুক্তিবদ্ধ হলেন সালাহউদ্দিন সুমন 

news image

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী পিঠা ফেস্টিভাল অ্যান্ড শাড়ি পাঞ্জাবি ডে" অনুষ্ঠিত

news image

দেশের প্রথম মাদক বিরোধী সংগঠন স্ট্যামফোর্ড মাদক বিরোধী সংগঠন

news image

নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর চেষ্টা/সরকার প্রেসের ১০ লাখ ফর্মার ৬০ হাজার বই জব্দ

news image

মানসম্মত গবেষণাকর্ম পরিচালনার আহ্বান ইউজিসির

news image

ডিজিটাল লিটারেসিতে ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেট পেল ১৮ জন শিক্ষার্থী

news image

ঢাকা কলেজে এক ঘণ্টায় ৭ ককটেল বিস্ফোরণ

news image

২০২৫ সালে মাধ্যমিকে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

news image

দাখিল পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল

news image

যে কারণে ১৭ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার

news image

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নতুন সভাপতি অধ্যাপক মাছুদ, কোষাধ্যক্ষ লতিফ

news image

একই দিনে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে

news image

বাংলাদেশে ক্যাম্পাস স্থাপন করতে চায় চীনের আইএনটিআই ইউনিভার্সিটি