শেখ ওয়ালিদ বিন জাকির ১৮ অক্টোবার ২০২৪ ১১:৫৫ এ.এম
আমাদের ৪৫ দিনের ইউরোপে ভ্রমণ শুরু হয় ইস্তানবুল থেকে। আমি যাই উগান্ডা থেকে দুবাই হয়ে ইস্তানবুল। আর আমার সহধর্মিণী যায় বাংলাদেশ থেকে সৌদি হয়ে ইস্তানবুল। আগেই বলে রাখি, ইস্তানবুল হলো বিশ্বের এমন একটা শহর; যার একাংশ ইউরোপে, আরেকাংশ এশিয়াতে। ইউরোপের অংশেই মূলত টুরিস্টরা যায়। আমরাও পুরো ইস্তানবুল সফরে ইউরোপের দিকেই ছিলাম।
আমরা ৪৫ দিনের সফরে মূলত দুইবার ইস্তাম্বুল যাই। শুরুতে ৩ দিন এবং শেষে ২ দিন। মানে সফরের শুরু এবং শেষ এখানেই। প্রথম ৩ দিন ছিল ইস্তানবুলের মূল নিদর্শনগুলা দেখার জন্য। আর শেষের ২ দিন ছিল কিছু ঐতিহ্যবাহী তুর্কিশ জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য। যদিও ৫ দিন শুনে মনে হতে পারে একটা শহর ঘোরার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ইস্তাম্বুল ঘোরার জন্য ৫ দিন কিছুই না। আর হ্যাঁ, এই পর্বে শুধু প্রথম ৩দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
ইস্তানবুলের সৈকত নিয়ে অনেকেরই জানাশোনা নেই। আমার পরিচিত অনেকেই তুর্কিতে ট্যুর করেছে, কিন্তু কখনোই ইস্তানবুলের সৈকতে যেতে শুনিনি। এখন আসেন ইস্তানবুলের সী-বীচের গল্প বলি।
আমি আমার সহধর্মিনীর চেয়ে ইস্তাম্বুল ১৫ ঘণ্টা আগে পৌঁছে যাই। তখন বাজে রাত ১২ টা। এয়ারপোর্টে নেমেই হারিয়ে গেলাম এক বিশাল এয়ারপোর্টের গোলক ধাঁধায়। ইস্তানবুল এয়ারপোর্টটা যে এত বড় তার কোন ধারণাই ছিল না আমার। তার ভেতর এটিএম মেশিনে আটকে গেল আমার ক্রেডিট কার্ড। সব ঝামেলা শেষ করে হোটেলে যাই রাত ২টায়।
আমার সহধর্মিণী পরের দিন দুপুর সাড়ে ৩টায় পৌঁছাবে। তাই এয়ারপোর্টের কাছেই একটা হোটেল ঠিক করার পরিকল্পনার করি। তখন গুগল ম্যাপসে এয়ারপোর্টের কাছেই একটি সমুদ্র দেখা যাচ্ছে, ব্ল্যাক সি। আর সি-বিচ এর কাছের হোটেলগুলোর ভাড়া মানানসই মনে হলো। তাই সি-বিচ এর কাছেই হোটেল ঠিক করি। ওই হোটেলে যেতে হলে শুধু ট্যাক্সিতেই যাওয়া যায়। বাস বা মেট্রো ওইদিকে যায় না। ট্যাক্সিতে যেতে ২০ মিনিট লাগে। ট্যাক্সি থেকে যখন নামলাম তখন আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ প্রথমত আমি দেখলাম আমার হোটেলটা একদম সৈকতের পাড়ে। দ্বিতীয়ত রাত ২টা বাজে তখন কিন্তু সৈকতে মানুষ গিজগিজ করছে। কেউ কেউ বিচে তাঁবু করে থাকছে। বাচ্চারা তখনও ছুটাছুটি করছে বিচে। প্রচুর বাতাস হচ্ছে। আর অনেকে তখন বিচে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। আর তৃতীয়ত ডানে বামে তাকিয়ে আমি শহরটার রাতের যেই দৃশ্যটি দেখলাম সেটা না আমার কোন ক্যামেরা বন্দি করে দেখাতে পারবে, না আমি ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারব। এক কথায় অসাধারণ একটা ভাইব পেলাম নেমেই।
তারপর আরও খুশি হয়ে গেলাম রুমটা দেখে। হোটেলটা যে এতো সুন্দর লোকেশনে তা আমি আগে ধারণাও করতে পারিনি। কারণ ভাড়া অনেক কম ছিল। পরে জানলাম আগোদা অ্যাপ থেকে আমাকে বিশাল ডিসকাউন্ট দেওয়ার কারণে আমি ১২০ ডলারের রুম ২০ ডলারে পেয়ে গেছি। যেটা দেখে হোটেল ম্যানেজার নিজেই অবাক। বলল এই অ্যাপ থেকে আপনিই আমাদের প্রথম কাস্টমার। ওই রাতে আমি এতো জার্নি করে আসার পরেও ঘুম আসছিল না। গোসল করে তারপর আবার বিচে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে বাতাস খেলাম আর ট্যুর এর প্রথম স্পটের অপ্রত্যাশিত সৌন্দর্যটা উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। শেষ পর্যন্ত ঘুমাতে ঘুমাতে ভোর হয়ে গেলো। তাই সূর্যোদয়টা দেখে তারপর ঘুমাতে গেলাম। ওই সময়টা ওইখানে অসম্ভব ভালো লাগছিল।
ক্লান্ত অনেক হলেও ঘুমাতে পারি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। তারপর উঠে হোটেলের বিচ ভিউ রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করতে যাই। মেনুতে ছিল মেনেমেন, তুর্কির ট্র্যাডিশনাল ব্রেড আর বিখ্যাত তুর্কিশ চা। ওইদিনের পর থেকে আমি মেনেমেনের ফ্যান হয়ে যাই। আর তুর্কিশ চা নিয়ে আমার আলাদা রকম কৌতূহল ছিল যে কি আছে এই চা তে? কেন তারা এতটা পাগল এই চা নিয়ে? প্রথমবারের মত চা খেয়ে খুব আলাদা কিছু মনে হয়নি আমার। চা তে লিকার ও চিনির অনুপাত ব্যালান্সড ছিল। কিন্তু একটা বিষয় খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি যে তুর্কির চা বেশ কড়া স্বাদ দেয়। মানে আমাদের দেশের চা একটু মসৃণ স্বাদের হয়। কিন্তু তুর্কিশ চা অল্প লিকারেই কড়া স্বাদ দেয়। এই চা তুর্কিতে পরিবেশন করা হয় টিউলিপ আকৃতির কাপে যা তুর্কিশ ভাষায় ইনসে বেলি বলা হয়। আমার ধারণা ছিল এই চা প্রিয় দেশে হয়তো অনেক চায়ের স্টল থাকবে অলিতে গলিতে। কিন্তু এখানে চায়ের কোন স্টল দেখতে পেলাম না। কারণ এই দেশে মানুষ শুধু শুধু চা পান করতে বের হয় না। চা এখানে একটা সংস্কৃতির অংশ। কোন শুভক্ষণে, কোন ব্যবসায়িক চুক্তিতে, বা যে কোন বেলার খাবারের সাথে চা না থাকলে এখানে মানুষ অপূর্ণতায় ভোগে। এই উদ্দেশ্যে এই দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, চা বিহীন বৈঠক, চাঁদ বিহীন রাতের আকাশের মত।
ব্রেকফাস্ট সেরে চলে গেলাম বিচে। সরগরম সি-বিচ। কারণ সেদিন ছিল সরকারি ছুটি। এখানে বিচ টা অনেক বড়। দূরে বিচ শহরটাও দেখতে সুন্দর লাগছিল। আবহাওয়া অনেক ভালো ছিল তখন। রোদ ছিল কিন্তু গরম ছিল না। আর প্রচুর বাতাস। এই সৈকতটা দেখতে অনেকটা আমাদের সেইন্টমার্টিন এর মতো। কিন্তু পানির রংটা অসম্ভব সুন্দর। নীল এবং বোটলগ্রিন এর মিশ্রণ। এই বিচে সব ধরনের মানুষ ছিল। বোরখা পরে সপরিবারে পিকনিক করছিল কেউ কেউ। কেউ আবার পাশেই বিকিনি পরে সানবাথ নিচ্ছিলো। কেউ উপভোগ করছিল ফ্যামিলি লাঞ্চ। আবার কেউ পান করছিল বিয়ার। কোনোটাতেই কারোর কোন বিকার ছিল না। যে যার মত সময় কাটাচ্ছিল। অন্যের জীবন নিয়ে নাক গলানো ব্যাপারটা এখানে নাই। আমাদের সাথে মানসিক পার্থক্যটা এখান থেকেই শুরু।
প্রায় ১ ঘণ্টা বিচে কাটানোর পর হোটেলের উঠানে গিয়ে ছায়ায় বসলাম। ওটাও বিচ বলা যায়। হোটেলের সামনে থেকে একটা সীমিত কিনলাম। এটা একটা তুর্কিশ স্ট্রিটফুড যা শক্ত একধরনের রুটি। টেস্টি না কিন্তু দামে কম এবং পেট ভরার মতো খাবার। হোটেল থেকে চকলেট মিক্স করে লাঞ্চ হিসেবে চালিয়ে দিলাম। তারপর যতক্ষণ ওখানে ছিলাম ততক্ষণ শুধু আল্লাহের শুকরিয়া আদায় করলাম আমার অজান্তেই এই রকম ১টা সুন্দর জায়গায় আমার রিজিক রাখার জন্য। হোটেল যেই জায়গায় ছিল সেখানকার নাম হল কারাবুরুন। এই জায়গা ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছা হচ্ছিল না। ভবিষ্যতে আবার এখানে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুপুর ২ টার দিকে রওনা দিলাম এয়ারপোর্টে। এই ছিল আমার ইস্তানবুলের সী-বীচের গল্প।
প্রায় ৪ টার দিকে দেখা পেলাম আমার সহধর্মিণী এর। সাথে আরো দেখা পেলাম তার সাথে আসা বড় বড় লাগেজগুলোর। তারপর বহু সংগ্রামের পর আমরা পৌঁছালাম আমাদের তাকসিম এর হোটেলে। ৩ দিন আমরা ওখানেই ছিলাম। তাকসিম জায়গাটা একটু লোকাল টাইপ। ঐদিন আমরা হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। যারা জানেন না তাদের জন্য বলে রাখি যে গ্রীষ্মের সিজনে তুর্কি সহ পুরা ইউরোপে সূর্যাস্ত হয় রাত ৯ টার দিকে। সূর্যোদয় হয় সকাল ৬ টার আগে। তার মানে দিন অনেক বড়। ঘোরার সময় অনেক পাওয়া যায় যা ট্যুর এর জন্য বেস্ট। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মের আগে এবং পরে সময় আবার কমতে থাকে। সূর্যোদয় হয় ৭ টারও পরে এবং আসতে আসতে সূর্যাস্ত চলে আসে ৬ টারও আগে। সেই হিসেবে ট্যুর এর জন্য ইউরোপে সামার সিজন বেস্ট। শুধুমাত্র এটাই কারণ না। আরও কারণ আছে যেগুলি আমি পরে বলবো। তো আমাদের হোটেলেই রাত ৯ টা বেজে যায়। আর আমরা জার্নি করে ক্লান্ত থাকার কারণে ওইদিন শুধু ডিনার এর জন্য বের হই। তুর্কিতে খাবার এক্সপ্লোর করা ছিল আমার ট্যুরের অন্যতম উদ্দেশ্য। ওইদিন ডিনার করতে বের হয়েই মূল রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে কয়েকটা স্ট্রিটফুড যেমন ঝিনুক, বাকলাভা ইত্যাদি ট্রাই করা শেষ। খাবার নিয়ে নিচে আলাদা কলাম লেখা হয়েছে যেখানে বিস্তারিত লেখা আছে। ডিনার করলাম একটা ট্র্যাডিশনাল ধরনের সাজানো লোকাল রেস্টুরেন্টে। দেখতে সুন্দর হলেও কিন্তু ওখানকার খাবারটা অতোটা আহামরি ছিল না। তখন বুঝলাম যে দাম বেশি হলেও ফুড ট্রাই করতে হলে কোন অথেন্টিক জায়গা থেকে ট্রাই করা উচিত। নাহলে ওই খাবারের আসল স্বাদটা বোঝা যাবে না। ওইদিন হোটেলের আশেপাশে ঘুরে আমরা হোটেলে চলে যাই।
পরদিন সকালে বের হয়ে পড়ি ইস্তানবুল জয় করতে। প্রথমে যাই ব্রেকফাস্ট করতে। সহধর্মিণীকে আমার প্রিয় মেনেমেন চিনালাম। তারপর গেলাম তাকসিম স্কয়ারে। আমাদের হোটেল থেকে তাকসিম স্কয়ারে যেতে ১ টা বড় রাস্তা পড়ে যেটা খুবই সুন্দর করে সাজানো, চারপাশে শুধু ব্রান্ডের দোকান এবং টুরিস্টে গম গম করে সবসময় রাস্তাটা। মানে ওখানে গেলেই একটা ফেস্টিভ ভাইব পাওয়া যায়। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম ট্রাম। পুরো ইউরোপ ট্যুরে প্রায় সব জায়গায় ট্রাম দেখেছি এবং চড়েছি। কিন্তু শুরুটা ছিল ইস্তানবুল থেকে। তাই এটা স্পেশাল। তাকসিম স্কয়ারটা সুন্দর। ওখানে ইস্তানবুলের ট্রেডিশনাল স্টাইলে বানানো একটা মসজিদ ও আছে। কিছুক্ষণ ছবি তুলে তারপর গেলাম মেট্রো স্টেশনে।
মেট্রোতে করে গেলাম সুলতান আহমেত এ। ওটাই এই শহরের মূল কেন্দ্র। ওখানেই অটোমান সাম্রাজ্যের বিখ্যাত আয়া সোফিয়া এবং ব্লু মস্ক রয়েছে পাশাপাশি। প্রথমে গেলাম ব্লু মস্ক। এখানে গিয়ে শুধু চোখ না মনও ভরে যায়। অনেকক্ষণ ছিলাম মসজিদের ভেতরে। বসে ক্লান্তিও দূর করে নিচ্ছিলাম। মসজিদের ভেতরের কারুকাজ আর ঝাড়বাতি গুলা ছিল চোখ ধাঁধানো সুন্দর। ওখানে একটা বাংলাদেশি পরিবারের সাথে দেখা হল। তারা সপরিবারে ঘুরতে এসেছে। ভিনদেশে বাঙালি পরিবারের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। ব্লু মস্কে মন ভরে যাওয়ার পরে বের হয়ে গেলাম আয়া সোফিয়ার দিকে। কিন্তু মাঝের পার্কে একটু বিরতি নিলাম। তখন ভরদুপুর, বেশ রোদ ছিল। কিন্তু ঘামি নাই। আবহাওয়া খুবই ভালো ছিল ইস্তাম্বুল। ২ মসজিদের মাঝের পার্কের ঝরনার পানি বাতাসে উড়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। ওখানে অনেকে বসে ছিল। কিছু বাচ্চা এসে ফোয়ারার পানিতে ভিজছিল। আমিও ওদের সাথে মিলে গেলাম। দুপুরের রোদে ভিজতে ভালোই লাগল। আয়া সোফিয়ার সামনে লাইন অনেক লম্বা ছিল। ওই লাইন দেখে আমরা ভাবছিলাম ওখানে সবাই টিকিট কেটে যায়। অনেক ভিড় ছিল। তাই আর বেশী দেরি না করে বের হয়ে গেলাম লাঞ্চ করতে। লাঞ্চ এ খাওয়া হলো কুম্পির। এটা বড় একটা স্টাফড পটেটো যা ২ জনের পেট ভরাতে পর্যাপ্ত। লাঞ্চ করে চলে গেলাম সেভেন হিলস রেস্টুরেন্টে। ওটার লোকেশন এবং ভিউ অসাধারণ। রুফটপ থেকে ১ দিকে ব্লু মস্ক আরেক দিকে আয়া সোফিয়া আর আরেক দিকে বসফরাস প্রণালি। এটাই মনে হয় পুরো ইস্তানবুলের ভেতর সবচেয়ে সুন্দর লোকেশন। ওই ছাদে পাখি উড়ে বেড়াই এবং পাখিদের খাবার খাওয়ায় সবাই। রেস্টুরেন্টটা স্বাভাবিকভাবে লোকেশনের কারণে অনেক এক্সপেন্সিভ। কিন্তু রুফটপে যাওয়া এবং পাখিদের খাওয়ানোটা ফ্রি। অনেক চেষ্টা করলেও পাখি গুলা আমার কাছ থেকে খাবার খেল না। কিন্তু আমার সহধর্মিণী যতবার চেষ্টা করেছে প্রতি বারই খাওয়াতে পেরেছে। এই জন্য আমি পাখি গুলাকে রেসিস্ট বার্ড উপাধি দেই।
ওখানে অনেক সময় কাটানোর পর আমরা যাই গালাতা টাওয়ারে। ট্রাম থেকে নামার পরে অনেক উঁচু রাস্তায় হেঁটে যাওয়া লাগে। মাঝে হাঁপিয়ে গেলে ফানটা কিনে খেয়ে আবার হাঁটি। ওখানে গিয়ে আবার লাইনে দাঁড়ানো লাগলো প্রায় আধা ঘণ্টা। তখনও জানতাম না যে ভেতরে টিকিট কেটে উঠা লাগে এই টাওয়ারে। ভেতরে গিয়ে টিকিটের দাম শুনে আমার সহধর্মিণী টাকা নষ্ট করে না যাওয়ার পরামর্শ দিলেও আমি এত কষ্ট করে এসে না দেখে ফিরে যেতে চাইনি। ফলাফল স্বরূপ টাওয়ার এ উঠার পর ৩০ মিনিট লাগে আমার সহধর্মিণীর রাগ ভাঙাতে। তারপর আরও ৩০ মিনিট লাগে তাকে বুঝাতে যে গালাতা টাওয়ারে উঠাটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ এখান থেকে পুরা ইস্তানবুল দেখা যায়। ইউরোপ ও এশিয়ার দুই পাশই দেখা যায়। মসজিদ, বসফরাস, ব্ল্যাক সী এবং মারমারা সাগর দেখা যায়। আর সবচেয়ে ভালো দিক ছিল আমাদের যাওয়ার সময়টা। সূর্যাস্তের আগে গিয়ে দিনের ভিউ, সূর্যাস্ত, গোধূলী এবং ইস্তানবুলের রাতের ভিউ সবই দেখা হয়ে গেল। এইটা ছিল মনে লেগে থাকার মতো এক্সপেরিয়েন্স। ওখান থেকে নেমে আমরা ছবি তোলা শুরু করি গালাতাকে ব্যাকগ্রাউন্ডে নিয়ে। তখন দেখি রাস্তায় ফ্লেম ক্যান্ডেল এবং বাজি ফোটানো হচ্ছে। ভালো করে দেখে বুঝলাম এখানে আংটি পরিয়ে বিয়ের জন্য প্রপোজ চলছে। আমরাও কাছে গিয়ে দেখলাম তাদের স্পেশাল মুহূর্ত। সবাই হাততালি দিলাম। সে এক ফেস্টিভ টাইপ ভাইব। সামারে না আসলে এই ভাইবটাই পেতাম না। চারিদিকে টুরিস্টে গম গম। নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে। এখানে রাস্তায় কেউ গান গাচ্ছে ওখানে কেউ পিয়ানো বাজাচ্ছে। মানে এই সামার ভাইব জীবনে একবার না পেলে ইউরোপে ঘুরতে যাওয়ায় বৃথা। তারপর ওখান থেকে চলে গেলাম আমাদের হোটেলে। এদিন ডিনারে ট্রাই করলাম দুরুম। অনেকটা শর্মা টাইপ। এটা তুর্কি সহ সারা ইউরোপে সব থেকে সহজলভ্য হালাল খাবার। খেতে সুস্বাদু ও বটে।
তৃতীয় দিন গেলাম আয়া সোফিয়াতে। প্রথমে বাইরের লম্বা লাইন দেখে ভাবলাম টিকিট কাটা লাগে।পরে বুঝলাম যে এটা ভেতরে ঢোকার লাইন। ভেতরের টুরিস্টরা বের হলে এরা ঢুকবে। আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে ঢুকে পড়লাম। আসলে এটা একটা মসজিদ হলেও এটা বানানো সম্পূর্ণ খ্রিস্টানদের ক্যাথেড্রালের আদলে যা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি ইতালিতে ক্যাথেড্রালে যাওয়ার পরে। প্রথমে এটা মসজিদ ছিল তারপর এটা ক্যাথেড্রালে রূপান্তরিত হয়। তারপর এটা গত কয়েক বছর হলো আবার মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় এরদোগানের আদেশে। তার আগে এটা জাদুঘর ছিল। মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করলেও এটার ভেতরে টুরিস্টদের অবাধ চলাফেরা। এমনকি নামাজের সময়ও টুরিস্টদের কন্ট্রোলে রাখা যাচ্ছিল না। মসজিদের উপরের দেয়ালে ছবি আকা আছে এখনও। যা তারা বড় কাপড় দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করলেও একটা কাপড় খুলে গিয়ে ছবির মুখ দেখা যাচ্ছে। ব্লু মাস্কের মতো এই মসজিদ এতটা সুন্দর নাহলেও ঐতিহাসিকভাবে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।
তারপর অনেকদূর হেঁটে যখন তোপকাপি প্যালেসে গেলাম তখন আমার সামনেই গেট বন্ধ করে বললো কাল সরকারি ছুটি তাই আজকে ১ ঘণ্টা আগে বন্ধ হবে। হলো না আর যাওয়া তোপকাপিতে। তখন বসফোরাস সানসেট ক্রুজ এর টিকিট কেটে চলে গেলাম ক্রুজে। এটা আরেকটা স্মরণীয় অনুভূতি। বসফরাস এবং ইস্তানবুল এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। আর আমাদের দেখে অদ্ভুত রকমের মুগ্ধ হল ইস্তাবুলবাসী। আমাদের ক্রুজে একজন জিজ্ঞেস করল আমরা কোথা থেকে এসেছি। উত্তরটা বাংলাদেশ শুনে এতটাই অবাক এবং হতাশ হলো যে আমাদের পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘আর ইউ সিওর?’ এমনকি এটাও বলল যে, ‘ব্যাপারটা কি এমন যে তোমরা বাংলাদেশি কিন্তু থাকো দুবাইতে?’ মানে দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের ইমেজটাই হলো গরীব, ছেড়া ময়লা কাপড় পরা, অশিক্ষিত টাইপ কামলা। এর বাইরে ওরা ভাবতেই পারে না আমাদের নিয়ে। যাইহোক ক্রুজ ট্যুর দিয়ে শেষ করলাম দিন।
পরের দিন দুপুরে আমাদের ফ্লাইট ছিল এথেন্সের। সকালে তাই দূরে না গিয়ে তাকসিম এর সব গলি আর রাস্তায় ঘুরলাম। বেশি সকালে সব রেস্টুরেন্ট খোলে না। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট হল বার, যা সারা রাত খোলা থাকে এবং সকালে বন্ধ করে। তাকসিম এর ওই সুন্দর রাস্তাটা আরেকবার ঘুরে আসলাম। তারপর দুপুর ১২ টার দিকে হোটেল ছাড়লাম। একটা জিনিস না বললে হয় না সেটা হলো তুর্কিশদের আন্তরিকতা। বিশেষ করে হোটেল এর কর্মচারীরা যে কী আন্তরিক তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা চলে যাওয়ার দিন হোটেলের ম্যানেজার নিজে আমাদের লাগেজ ২০ মিনিট ধরে উঁচু নীচু রাস্তায় টেনে আমাদের এয়ারপোর্টের বাস ঠিক করে দিয়ে বাসে উঠায় দিয়ে আসছে। এমন না যে এটার জন্য সে কোন বকশিশ চেয়েছে। কোন জায়গা উপভোগ করার জন্য যেসব ফ্যাক্টর দায়ী তার ভেতর অন্যতম হলো সেখানকার মানুষ। এটাই তার প্রমাণ। আপনি এই জায়গায় কেন আবার আসবেন না এমন আন্তরিকতা পেলে?
ইউরোপ এর অন্য শহরগুলো সুন্দর তাই মানুষ ঘুরতে যায়। কিন্তু ইস্তানবুল শহরটা দেখলে মনে হয় যে আমরা ঘুরতে যাব সেই উপলক্ষেই এই শহর সাজানো হয়েছে। খুবই সাজানো গোছানো ১ টা শহর। এইখানে ঘুরতে হলে প্রচুর হাঁটতে হবে। কারণ মেট্রো স্টেশন দূরে দূরে। আর সব জায়গায় তো ট্রাম ও যায় না। আর ট্যাক্সি মানে তো স্ক্যাম, এই জন্য এয়ারপোর্ট থেকে যাওয়া আসা বাদে ট্যাক্সি নেওয়া হারাম এখানে। যারা একটু বেশি টাকা খরচ করে একটু বেশি রিলাক্স ট্যুর করবে তাদের কথা আলাদা। তার উপর আবার পাহাড়ি টাইপ রাস্তা। কোন শহর ভালো ভাবে দেখার জন্য হেঁটে ট্যুর করার কোন বিকল্প নাই। কিন্তু ইস্তানবুলে এতোই হাঁটা লাগে যে আমার ৩ দিনে পায়ের তলা ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। মেট্রোতে ২ জন ইরাকি টুরিস্ট এর সাথে কথা হচ্ছিল। আমাকে বলল হাঁটতে হাঁটতে আমার পাঁয়ের পাতা ব্যথা হয়ে গেছে তোমার হয়নি? আমি বললাম হ্যাঁ হয়েছে। সে বলল আমাদের দেশে এতো হাঁটা লাগে না ট্যাক্সি আছে। আমি বললাম আমাদের দেশে আরও ভালো জিনিস আছে। সেটার নাম রিকশা। আমরা ১০ কদমও হাঁটি না। সব জায়গায় রিকশাতে যাই। কিন্তু অনেক হাটলেও ইস্তাবুলে কষ্ট হয়নি। এই শহরে বার বার আসা যায়। তবুও খারাপ লাগবে না। আমি তো পারলে প্রতি বছর এই শহরে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে যেতাম। এই ছিল আমাদের ইস্তানবুলের ১ম ভাগের ভ্রমণ।
রবিন রাফানের এআই মাস্টারক্লাসে অভূতপূর্ব সাড়া, দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা
যেভাবে অনলাইনে ভাইরাল হওয়া কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো
ঈদ সালামি থেকে ঈদী: সংস্কৃতির বিবর্তন
সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো মসজিদ
শিশু সাহিত্যের ধ্রুবতারা শিবুকান্তি দাশ
জনতার কন্ঠস্বর
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ
স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা
সান্তা ক্লজ আছেন বাস্তবেই, থাকেন কোথায় জানেন?
শীতে পরিযায়ী পাখিরা কীভাবে সহস্র মাইল পথ চিনে যায়-আসে?
শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভার পরামর্শ
শীতে প্রকৃতি উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন গ্রাম থেকে
কৃষিকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া জিহাদ এখন ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করেন
ঈশান হতে অগ্নি
কুমড়ার নৌকায় ৭৩ কিমি. পাড়ি দিয়ে রেকর্ড
বিশ্বের বৃহত্তম বন্দী কুমিরের মৃত্যু
বাংলাদেশের যে গ্রামে বাস করেন মাত্র ৪ জন
টি অ্যান্ড টেলস: এক অনন্য সাহিত্য বিকেল
যে ৭ আচরণ দেখে স্বার্থপর ব্যক্তি চিনবেন
যেসব দেশে মুসলিমদের বসবাস বা ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ!
ফ্রিল্যান্সিং এ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা
শিশুকে যৌন নির্যাতন : ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
আপনার স্ত্রীকে যে কথাগুলো কখনোই বলবেন না
ইউরোপীয় ইস্তাম্বুলে কয়েকদিন
অভিভাকদের যেসব কাজে নষ্ট হয় শিশুর আত্মবিশ্বাস
কক্সবাজারে সমুদ্রস্নানে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
শরৎ বন্দনা
আত্মবিশ্বাসী হওয়া দরকার
ফ্লেমিংগো একটি পাখির নাম
পানির ওপর ৩৩ কিমি. বাইক চালিয়ে বিশ্বরেকর্ড!