মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
আইন

প্রবাসীদের টার্গেট করে অভিনব প্রতারণা: বিয়ের প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৩ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০৬:৩৭ পি.এম

প্রবাসীদের টার্গেট করে অভিনব প্রতারণা: বিয়ের প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বা কর্মরত প্রবাসী তরুণদের টার্গেট করে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার এক মা-মেয়ের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি থেকে শুরু করে বিয়ের প্রলোভন দেখানো, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া, পরে সম্পর্ক ভেঙে হুমকি ও মানহানির ফাঁদে ফেলা—পুরো ঘটনাই যেন এক নাটকীয় কৌশল।

আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাবিনা ইয়াসমিন (৫০) ও তার মেয়ে জিনিয়া রহমান (২৩) দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রবাসী তরুণদের টার্গেট করছেন। তাদের সহায়তা করছে পরিবারের অন্য সদস্যরাও, যার মধ্যে ছেলে—আশফিকুর রহমান (২৬) এর নামেও অভিযোগ উঠেছে।

সম্পর্কের শুরু ফেসবুকে ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথমে ফেসবুকে মেয়েই নিজে থেকে যোগাযোগ শুরু করে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বিয়ের কথা বলে সম্পর্ক তৈরি করে। প্রবাসী যুবকরা প্রথমে এটিকে আন্তরিক প্রস্তাব মনে করলেও পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন এটি ছিল ফাঁদ।

বছরের পর বছর ধরে চলা এ ধরনের ঘটনায় দেখা যায়, মেয়েটি বিয়ের কথা তুললেই পরিবারকেও যুক্ত করে। এরপর কোনো কারণে ছেলের পরিবার রাজি না হলে বা কোনো বিষয়ে বনিবনা না হলে, মা সাবিনা ইয়াসমিন সরাসরি ছেলের বাবা-মাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এক ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য জানান—“তারা বিয়ের চাপ দিতে থাকে। পরে আমারা না বললে উল্টো গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। আমাদের সামাজিকভাবে মানহানি করে।”

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, সম্পর্কের মধ্যে পড়েই মেয়েটি নানা অজুহাতে টাকা দাবি করতে শুরু করে। কখনো দামি গিফট, কখনো স্বর্ণালঙ্কার, কখনো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি-র নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকাগুলো নেওয়া হতো বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

একজন প্রবাসী তরুণ বলেন—“ভালোবাসার নামে টিউশন ফি দিতে বলত। কখনো গিফট, কখনো অলংকার। সম্পর্কের চাপে পড়ে দিতে হতো। পরে বুঝেছি, এরকম একাধিক ছেলেকে এভাবে প্রতারণা করেছে।”সম্পর্ক ভেঙে গেলে শুরু হয় হুমকি। ফোনে কল দিয়ে, এমনকি ভুক্তভোগীর পরিবারের পরিচিতজনদেরও ফোন করে হুমকি ও অপমান করে। কখনো মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়, কখনো সমাজে অপবাদ ছড়ায়।

সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তার পরিবারকে রক্ষার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এই মা-মেয়ে এবং তাদের পরিবার যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, জিনিয়া রহমান রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ও খরচ জোগাড় করতে মায়ের সহায়তায় এসব প্রতারণাই তার প্রধান ভরসা।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক তরুণের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। বন্ধুদের সাথে দূরপাল্লার ভ্রমণ, রাত যাপন এবং অনলাইনভিত্তিক অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথাও শোনা যায়। অতীতে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং পরে স্থানীয় হাসপাতালে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগও আছে। এই চক্র মূলত যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় থাকা প্রবাসী তরুণদের টার্গেট করছে। উচ্চশিক্ষায় সফল বা কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখায় তারা। এক ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, “আমি যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য আছি। সফলতা ও ভালো অবস্থানের কারণেই তারা আমাকে টার্গেট করেছে।”

সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের প্রতারণা শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতিরও কারণ হচ্ছে। প্রবাসীরা দেশে এসে পরিবার গঠন করতে চান, কিন্তু এই প্রতারণা তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

স্থানীয়রা জানান, এরকম ঘটনা নতুন নয়। পূর্বেও এরকম ঘটনা ঘটেছে, আমরা শুনেছি। এরা একটা প্রতারক চক্র। এদের টার্গেট ইউরোপের প্রবাসী বাংলাদেশী। তাদেরকে বিয়েসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিয়ে পরে তাদেরকে একপ্রকার ফাঁদে ফেলা হয়।  তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এবার প্রবাসীর নাম জড়িয়ে পরিবারের সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা চলছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নাম্বারটি বন্ধ দেখায়।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন,"অভিযোগটি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী পরিবারকে আমরা সব ধরনের সহায়তা করব।"


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

আ.লীগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শিগগিরই শুরু: চিফ প্রসিকিউটর

news image

পূজায় পুলিশের গুলি চুরি, ৩ আসামি রিমান্ডে

news image

কালচার অনেক সময় আইনের থেকেও বেশি গুরুত্ব পায় : গোলাম মাওলা রনি

news image

ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি ১৪ অক্টোবর

news image

দুই ভাইসহ এস আলমকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ

news image

যে কারণে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়ালেন কামরুল ইসলাম

news image

আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যাওয়া জোড়া খুনের আসামি গ্রেফতার

news image

ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক কাউন্সিলর আ.লীগ নেত্রী নার্গিস গ্রেফতার

news image

৯ দেশে জাবেদের ৬০২টি সম্পদ ফাইল উদ্ধার

news image

৮২ লাখ টাকা খুইয়ে সচিব জানলেন প্রতারিত

news image

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, দাবি স্টেট ডিফেন্সের

news image

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি: দাবি আইনজীবীর

news image

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ অর্জনের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার

news image

খিলগাঁওয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-সৈনিক লীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার

news image

জবানবন্দিতে নাহিদ: 'রাজাকারের নাতিপুতি' বলায় শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করেছিলেন

news image

মুজিব-হাসিনা দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন: মাহমুদুর রহমান

news image

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্ত দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ

news image

আইন সংশোধন সংক্রান্ত কাজ ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চায় সরকার

news image

১২১ বার পেছাল সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন

news image

প্রবাসীদের টার্গেট করে অভিনব প্রতারণা: বিয়ের প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ

news image

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র: শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

news image

‘ছাগলকাণ্ডের’ সেই মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

news image

৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, সালিসে ১৫ হাজার টাকায় রফা

news image

৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই : আপিল বিভাগ

news image

ধর্ষণের হুমকি দেওয়া আলী হুসেনকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার

news image

আপিল বিভাগে অবকাশকালীন দুই বিচারপতি মনোনয়ন

news image

আ.লীগের মিছিলে ‘স্লোগান দিয়ে’ গ্রেপ্তার বাকপ্রতিবন্ধী সাইদের জামিন

news image

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি / ৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছে স্বপনচক্র

news image

পাথর লুটপাট নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ সুপারিশ, এল জড়িতদের নাম

news image

মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসিরের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ