ফেরারি মিজান ১৪ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০৩:৩৭ পি.এম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা তার কণ্ঠে উচ্চারিত হওয়া ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা, যা কোটি মানুষের মধ্যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু সামরিক কর্মকর্তা হিসেবেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, দুর্বৃত্তায়ন, এবং প্রশাসনিক ভঙ্গুরতার শিকার। ঠিক সেই সময়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। তিনি সেনাবাহিনী পুনর্গঠন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংস্কার, কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। এককথায়, তিনি “গণমানুষের নেতা” হিসেবে দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।
জিয়ার গণতন্ত্রচিন্তা ও রাষ্ট্রনায়কত্ব
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল—গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনীতি কেবল ক্ষমতা অর্জনের জন্য নয়, বরং জাতিকে একটি লক্ষ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য। তার সময়ে তিনি যে সংস্কারগুলো করেছিলেন তা আজও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নে পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত জনগণের ক্ষমতায়ন ও বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তনের জন্য। জিয়াউর রহমান মনে করতেন, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ তার প্রতিষ্ঠিত দলের ভেতরে কিছু অংশের কর্মকাণ্ড তার সেই দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র উপস্থাপন করছে।
দলের ভেতরের অবক্ষয়ের চিত্র
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে দেখা যায়, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
টেন্ডারবাজি ও সহিংসতা: বরিশালে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সেনা কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের অপকর্ম দলের জন্য মারাত্মক বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে।
চাঁদাবাজি: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা, পরিবহন খাত থেকে টাকা আদায় কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দখল প্রতিষ্ঠা করা—এসব অভিযোগ বারবার আসছে।
জমি দখল: মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখল পর্যন্ত করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে। এটি শুধু অপরাধ নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
অস্ত্রধারণ ও সন্ত্রাস: রাজনীতির নামে অস্ত্রবাজি জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে, অথচ জিয়াউর রহমান কখনো এমন রাজনীতির পক্ষপাতী ছিলেন না।
যৌন সহিংসতা: স্থানীয় পর্যায়ে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় জড়িত থাকার খবরও প্রকাশিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক শৃঙ্খলা এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে যে, দলের ভেতরে কিছু অরাজনৈতিক ও অসৎ ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যারা রাজনীতিকে জনসেবার পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছে।
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও আস্থাহানি
রাজনীতি তখনই টেকসই হয় যখন জনগণ আস্থা রাখে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হলেও বর্তমানে দলের ভেতরের অসংগঠিত ও দুর্নীতিপূর্ণ কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষ যখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসের সঙ্গে নেতাদের জড়িয়ে পড়তে দেখে, তখন তারা দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এর ফলে গণতান্ত্রিক বিকল্প নেতৃত্ব দুর্বল হয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
বিএনপি যদি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে তাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত এ ধরনের অপকর্মে জড়িতদের দল থেকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা এবং রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান চালানো।
সমাধানের পথ ও সুপারিশ
১. দলীয় শুদ্ধি অভিযান: অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. যুবসমাজের ইতিবাচক সম্পৃক্ততা: ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোকে শিক্ষাবান্ধব, সৃজনশীল কার্যক্রমে যুক্ত করা।
৩. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: দলের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৪. রাজনৈতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: নতুন প্রজন্মের নেতাদের জন্য রাজনৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রচর্চার প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।
৫. আদর্শে প্রত্যাবর্তন: দলের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত প্রতিষ্ঠাতার দর্শন—গণমানুষের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা।
উপসংহার
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন আদর্শিক রাষ্ট্রনায়ক, যিনি দেশকে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন “গণমানুষের নেতা”। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির ভেতরে কিছু নেতাকর্মীর অপকর্ম তার সেই মহান আদর্শকে বিতর্কিত করছে।
অতএব, প্রশ্ন ওঠে—শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বিতর্কিত করছে কারা? উত্তর একটাই: তারা হলো বিএনপির ভেতরে থাকা সেইসব অরাজনৈতিক, উশৃঙ্খল ও অসৎ ব্যক্তি, যাদের লোভ-লালসা ও দুর্নীতি গণমানুষের রাজনীতিকে কলুষিত করছে।
এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আদর্শ রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির প্রকৃত নেতৃত্বের। যদি তারা সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়, তবে শুধু দলের নয়, দেশের রাজনীতিরও অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আর যদি সত্যিকার অর্থে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়, তবে জিয়াউর রহমানের নাম ও আদর্শ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনন্তকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
রাজনীতি, বুদ্ধিজীবী ও টকশো-সংস্কৃতি: বিভ্রান্ত এক দেশ
পেশা নয়, সেবা—এটাই হোক রাজনীতি
যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনার থেরাপি প্রয়োজন
ইসলামিক রাজনীতি বনাম গণতান্ত্রিক রাজনীতি: মুসলমানদের অন্তর্দ্বন্দ্ব
শারীরিক ও মানসিক সুস্থ থাকতে দরকার আলিঙ্গনের
সঙ্গী নার্সিসিস্ট কি না চিনবেন যেভাবে
৬ উপসর্গে এআই নয়, চাই সরাসরি চিকিৎসক
এসিতে বিস্ফোরণ? এই ৫টি সংকেত কখনোই উপেক্ষা করবেন না!
যেভাবে বুঝবেন আপনার বিশ্রাম দরকার
বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ আজ
৪৩০ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, লাগবে এসএসসি পাস
বাংলাদেশের স্বৈরতন্ত্রের ইতিহাস ও পি আর পদ্ধতির প্রযোজ্যতা
জাপানিদের দীর্ঘ ও সুখী জীবনের রহস্য
"একাত্তরের অর্জিত নামমাত্র স্বাধীনতা"
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বিতর্কিত করতেছে কারা?
সোলো ট্রিপের জন্য ঘুরে আসুন এই ৫টি দেশে
পুরো মানুষ গিলে ফেলতে সক্ষম যে ৬টি ভয়ংকর প্রাণী
চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা কি নিরাপদ?
খোলা চিঠি
দামাল কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চে আবারো ‘দামাল ছেলে নজরুল’
তারেক জিয়ার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি
রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় নির্বাচন ব্যবস্থা!
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রয়াণ দিবসে সুরেলা সন্ধ্যা
রবিন রাফানের এআই মাস্টারক্লাসে অভূতপূর্ব সাড়া, দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা
যেভাবে অনলাইনে ভাইরাল হওয়া কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো
ঈদ সালামি থেকে ঈদী: সংস্কৃতির বিবর্তন
সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো মসজিদ
শিশু সাহিত্যের ধ্রুবতারা শিবুকান্তি দাশ
জনতার কন্ঠস্বর
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ